বৃহস্পতিবার,

০২ মে ২০২৪,

১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার,

০২ মে ২০২৪,

১৯ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

দেশের বৃহৎ পাইকারী কাপড়ের বাজার

শেখেরচর-বাবুরহাটে আগুনে পুড়লো ৮০ দোকান, ক্ষতি প্রায় শত কোটি টাকা

আশিকুর রহমান, নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:০৮, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

আপডেট: ২২:১০, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

Google News
শেখেরচর-বাবুরহাটে আগুনে পুড়লো ৮০ দোকান, ক্ষতি প্রায় শত কোটি টাকা

ছবিঃ রেডিও টুডে

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত শেখেরচর-বাবুরহাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে বণিক সমিতির পুরাতন অফিস সংলগ্ন গলিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ৩ ঘন্টার চেষ্টায় রাত সোয়া ২ টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট।

এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৮০টি দেশিয় কাপড়ের পাইকারী দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান, শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: গিয়াস উদ্দিন। বাজারের বৈদ্যুতিক খুঁটির ল্যাম্পপোস্ট থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বণিক সমিতির সভাপতি।

সরেজমিন গিয়ে বাজারের ব্যবসায়ী, বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি শুক্র থেকে রোববার পর্যন্ত পাইকারী এই হাটে বেচাকেনা চলে। হাটের শেষ দিনগত রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বণিক সমিতির পুরাতন অফিসের গলিতে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান স্থানীয়রা। মুহর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাজারের গলির ৭০-৮০টি দোকানে। ভয়াবহ আগুনের ধোয়া ও লেলিহান শিখায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দোকান মালিকরা লোকজন নিয়ে মালামাল সরানোর চেষ্টা ও আগুন নেভানোর কাজে নামেন। অনেক ব্যবসায়ী আগুনের ভয়াবহতা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এসময় খবর দেয়া হলে পর্যায়ক্রমে মাধবদী ও নরসিংদীসহ আশেপাশের ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। বাজারে গলিতে প্রবেশের রাস্তার সেতু ভাঙ্গা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী প্রবেশ করতে পারেনি। পরে তারা রিজার্ভ ট্যাংকির পানি ও পাশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ তিন ঘন্টা চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে শাড়ি, লুঙ্গী, থ্রিপিস, থানকাপড়সহ দেশিয় কাপড়ের শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। এসব দোকান থেকে কোন কাপড় সরানো যায়নি বলে জানান তারা। এতে ১শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা।  খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম ও পুলিশ সুপার মো: মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, আগুন দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। সেতু ভাঙ্গা থাকায় তারা গাড়ি নিয়ে বাজারের গলিতে ঢুকতে পারেনি। ৩ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে কমপক্ষে ৮০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তদন্তের পর ক্ষতিগ্রস্ত মোট দোকানের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

ঢাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক মো: আনোয়ারুল হক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ব্রীজ ভাঙ্গার কারণে আমাদের গাড়ি একটু দূরে রেখে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। পাশের খালের পানিতে পাম্প স্থাপন করে একেএকে মোট ১০টি ইউনিট ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখানে প্রায় সবগুলো টিনের ঘর হওয়ায় পানি দেয়ায় ভেতরে পানি ঢুকছিল না, এজন্য টিন ভেঙ্গে পানি দিতে হয়েছে। আগুণের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তাৎক্ষনিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসি। আগুন লাগার সময় একটি চক্র থাকে লুটপাটের চেষ্টা করে, এমনটা যাতে না হয়, আমাদের ৭০ জনের মত ডিবি পুলিশ সদস্য সে দায়িত্ব পালন করেছে। অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা যানজট ও বাড়তি লোকজনের ভীড় এড়াতে দায়িত্ব পালন করে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভানোর কাজে সহযোগিতা করেন।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, এটি একটি বিস্তৃত বড় বাজার, ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আগুনের ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রা শিকারীকে প্রধান করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বণিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে সরকারীভাবে সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

 নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, বাবুরহাটের কাপড়ের পট্টি থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুন লাগার খবর আসে ১১ টা ১৭ মিনিট। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট পৌঁছায় ১১ টা ২৫ মিনিটে। পরবর্তীতে নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরেরও কয়েকটি ইউনিট যোগ দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রনে মোট ১০ টি ইউনিট কাজ করে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে  পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা কাজ করে।

রাত সাড়ে ৩ টায় ঢাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারি পরিচালক আনোয়ারুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, কি কারণে আগুনের সূত্রপাত তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ক্ষতির পরিমাণও নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। নরসিংদীসহ আশপাশের এলাকার ফায়ার সার্ভিসের ১০ টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘন্টার বেশি সময় চেষ্টা চালিয়ে রাত ২টা ৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। 

রেডিওটুডে নিউজ/এসবি

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের