
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকেই অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে দ্বীপটির প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।
বসতঘর, দোকানপাট, সড়ক, ফসলি জমি ও মাছের ঘের চলে গেছে পানির নিচে। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয়দের জনজীবন।
নিঝুমদ্বীপের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মিলন জানান, বসতঘরের ভেতরে হাঁটুপানি উঠেছে, রান্নাঘর, উঠান সব ডুবে গেছে। স্ত্রী-সন্তানরা খাটের উপর ঠাঁই নিয়েছেন, আর গবাদিপশুগুলো দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির পাশের কাঁচা সড়কে। "জীবন মানেই নদীর সঙ্গে যুদ্ধ। এবার মাছও নেই, ঋণ করে চলছি, এখন ঘরে চুলা জ্বালানোর কিছু নেই।" — বলেন মিলন।
দ্বীপের আরেক বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, সকাল ১০টা থেকে টানা বর্ষণ ও জোয়ারে নিম্নাঞ্চল দ্রুত ডুবে যায়। নামার বাজার, বন্দর কিল্লা, ইসলামপুর, মোল্লা গ্রামসহ পুরো নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পানির নিচে চলে যায়। গরুর খাবার, হাঁস-মুরগি ও মাছের ঘের ভেসে গেছে, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
দ্বীপবাসীরা জানায়, জোয়ারের পানি এত দ্রুত এসেছিল যে তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে গাছতলা কিংবা কারও উঁচু বাড়ির আঙিনায়।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেফায়েত হোসেন বলেন, নিঝুমদ্বীপ এখন জলাবদ্ধতার দ্বীপে পরিণত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছরই এই দুর্ভোগ দেখতে হয়। এবার পুরো ইউনিয়ন পানির নিচে। হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবারই মানুষ ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারায়। অথচ এখনো টেকসই বেড়িবাঁধ বা কার্যকর ত্রাণ ব্যবস্থার দেখা মেলেনি। কবে মিলনেরা ঘরে ফিরবে? কবে নিঝুমদ্বীপের মানুষ নিরাপদ হবে?
হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। তবে রাতে আরেক দফা জোয়ার হতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দাদের এখন একটাই দাবি—দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পর্যাপ্ত ত্রাণ ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন পরিকল্পনা। নয়তো প্রকৃতির সঙ্গে এই অসম লড়াইয়ে তারা বারবার হারিয়ে যাবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম