
বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম, দামও চড়া। এমন অবস্থায়ও বিদেশে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সৌদি আরবে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে এসব ইলিশ পৌঁছাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে।
এদিকে দেশের বাজারে নদীর এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ দুই হাজার থেকে দুই ২০০ টাকায়, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এলাকা ও মাছের আকারভেদে বাজারগুলোতে আরও বেশি দামে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি ভোক্তাদের।
জানা গেছে, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। দেখা না মেলায় এ বছর চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জের আড়ত ও হাটবাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ।
মাছ ব্যবসায়ীরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানি মুন্সীগঞ্জ জেলা হয়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এ কারণে ভরা মৌসুমেও মেঘনা-পদ্মায় আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না।
এদিকে সরকারি তথ্য বলছে, বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮৬ শতাংশ ইলিশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ, অঞ্চলভিত্তিক বিভাজন এবং পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রবণতা দেখানো হয়। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছরই ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯৯ হাজার টন, সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার টনে পৌঁছায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুসারে ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ ২৯ হাজার টন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মডেল অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের ইলিশ উৎপাদন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার টন হতে পারে। কিন্তু এটাও সতর্ক করে দেওয়া হয় যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মতো উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে প্রকৃত উৎপাদন আরো কম হতে পারে।
বিদেশে ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে গত সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, দেশে বসবাসরত আপামর জনগোষ্ঠীর মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাথমিকভাবে এক বা দুটি দেশে (বিশেষত যেখানে অপেক্ষাকৃত বেশিসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন) ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এটি পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও ডিজেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে দেশে বর্তমানে ইলিশের দাম বেশি। ইলিশের দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম