
কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করছেন প্রাসাদপম বাড়ি। বিশাল এলাকা জুড়ে করা এ বাড়িটি যেখানে করা হচ্ছে সেখানে দুই দশক আগে থেকেই রয়েছে একটি কমিউনিটি হাসপাতাল। তাই সেটিকে উচ্ছেদ করে নিজের বাড়ির সৌন্দর্য ও পরিধি বাড়াচ্ছেন প্রভাবশালী মালিক। ইতোমধ্যে ওই বাড়িটির বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। হাসপাতাল সরিয়ে ফেলার এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলেছে, সরকারি কোনো স্থাপনা ভাঙ্গা কিংবা অপসারনের ক্ষমতা কেবল সরকারেরই রয়েছে। কেউ চাইলেই তা ভাঙ্গতে পারে না।
জানা গেছে, ২০০০ সালে বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে অবস্থিত কালিকাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময় সরকারি নিয়ম অনুযায়ি জমি অধিগ্রহণ করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দলিলুর রহমান সিকদারের কাছ থেকে। ৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা ওই ক্লিনিকটিই এলাকাবাসী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র মাধ্যম।
বরিশাল জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ভূমি দাতা দলিলুর রহমান সিকদার। দলীয় পরিচয় দিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তিনি। এ অবস্থায় তার পুরনো বাড়িটি ভেঙ্গে বিশাল যায়গার উপর একটি প্রাসাদপম বাড়ি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এ অবস্থায় বাড়ির সৌন্দর্য ও পরিধি বাড়াতে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভেঙ্গে ফেলা শুরু করেন। ইতোমধ্যে ভবনটির বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান অধ্যক্ষ শাজাহান তালুকদার বলেন, জমিদাতা তার বাড়ির সৌন্দর্য রক্ষার জন্য ক্লিনিকটি অন্যত্র স্থাপনের অবেদন করেন। আমার ইউনিয়ন পরিষদের সভায় এটিকে অনুমোদন দিয়েছি বর্তমানে এটি ওই সীমানার একশ গজের মধ্যে স্থাপনের কাজ চলছে। ভূমিদাতা যদি এটি সরিয়ে অন্যত্র নির্মান করে দেন তাতে সমস্যা নেই বলে মনে করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে জমিদাতা ও জেলা পরিষদের সদস্য দলিলুর সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে তার ব্যক্তিগত কর্মচারী পরিচয়দানকারী সোহাগ নামের এক ব্যক্তি বলেন,‘এখানে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য কিছুটা সমস্যা হওয়ায় পাশেই হাসপাতাল নির্মাণ করে দিচ্ছি। এতে সমস্যা কোথায়?;
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, 'জমিদাতা তার বাড়ি সম্প্রসারনের জন্য ক্লিনিকটি সরিয়ে অন্যত্র স্থাপণ করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কেনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।'
এ দিকে হাসপাতাল ভেঙ্গে বাড়ি নির্মান নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও বিষয়টি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেন নাই।
তবে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলছেন, সরকারি কোনো স্থাপণাই কেউ ভাঙতে পারেনা। প্রয়োজন হলেও সরকাই সেটা ভাঙ্গবে। যদি কেউ এ ধরণের কাজ করে থাকেন সেটা অবশ্যই বেআইনী। সরকার উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
এদিকে ঘটনার জানার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। শুক্রবার সকালে বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, তিনি হিজালার কালিকাপুরে সরেজমিনে যাচ্ছেন। তথ্যটি জানিয়ে সরকারের উপকার করেছেন এমন মন্তব্য করে এই প্রতিবেদককে ধন্যবাদও জানান সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার।
রেডিওটুডে নিউজ/এমএস/ইকে