শুকিয়ে গেছে খাল, সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

সোমবার,

২২ ডিসেম্বর ২০২৫,

৮ পৌষ ১৪৩২

সোমবার,

২২ ডিসেম্বর ২০২৫,

৮ পৌষ ১৪৩২

Radio Today News

শুকিয়ে গেছে খাল, সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
শুকিয়ে গেছে খাল, সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারসংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের এস-৬এ সেচ খাল (সেকেন্ডারি সেচ খাল)। খালটি গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে শুকিয়ে গেছে। এমন চিত্র ঝিনাইদহের জিকে সেচ প্রকল্পের সব কটি খালের। ফলে শুকনো মৌসুমে ফসল চাষের জন্য বিনামূল্যে সেচের ব্যবস্থা করা কৃষকের কাছে শুধুই দুঃস্বপ্ন।

সম্প্রতি সরেজমিন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা এবং মনোহরপুর-দামুকদিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে মিলেছে কৃষকের দুঃখ-দুদর্শার চিত্র।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলায় কৃষি সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্য গত শতকের পঞ্চাশের দশকে জিকে সেচ প্রকল্প নেওয়া হয়। ১৯৬২  সালে সেচ প্রকল্পটি চালু করা হয়। সেচ প্রকল্পের প্রধান কেন্দ্র কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার পদ্মা নদীর অববাহিকায়। প্রকল্পের আওতায় শৈলকুপা উপজেলায় সেচের পানির চাহিদা রয়েছে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। ১৯৬৮ সালে উপজেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমি সেচ প্রকল্পের পানি সুবিধা পায়। ২০২৫ সালে ‘এস-৯ কে’ সেচখালের আওতায় কাতলাগাড়ী, দামুকদিয়াসহ অন্য এলাকার তিন হাজার ২০০ হেক্টর আবাদি জমিতে পানি পৌঁছায়। 

প্রথম দিকে সেচ প্রকল্পের খালে পানির সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে খালগুলো শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমন ও বোরো কোনো মৌসুমেই সেচের সামান্য পানিও পায়নি কৃষকরা। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে শুধু বর্ষা মৌসুমে আমন ধান আবাদের সময় অনিয়মিতভাবে পানি পাওয়া যায়। 

জিকে প্রকল্পের খালগুলো শুকিয়ে যাওয়াই বোরো মৌসুমে ধানের আবাদে পানি সেচের খরচ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। মৌসুম শেষে সেচ বাবদ সেচযন্ত্রের মালিককে বিঘাপ্রতি উৎপাদিত ধানের ছয় ভাগের এক ভাগ অথবা ৮-১০ হাজার টাকা দিতে হয়। বর্ষা মৌসুমেও এলাকাভেদে সেচের জন্য বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়।

পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর জিকে সেচ প্রকল্পে কোনো বড় ধরনের সংস্কার বা মেরামতকাজ হয়নি, নতুন পাম্পও বসেনি। পদ্মা নদীর পানি সব সময় পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভারত থেকে চুক্তির পানিও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। এ কারণে সেচের সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। তিনি জানান, পাউবোর আওতায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ছোট-বড় ১০৫টি সেচ খাল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ২৫৫ কিলোমিটার। 

শৈলকুপা উপজেলার দামুকদিয়া এলাকার কৃষক মিলন মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে পাউবো খাল থেকে কিছুটা পানি পেলেও বোরো মৌসুমে ধানের খেতে সেচ দিতে পানি পাওয়া যায় না। 

উপজেলার কুলচারা গ্রামের কৃষক জামিল ফেরদৌস বলেন, সেচ খাল আছে; কিন্তু খালে পানি নেই। এতে ফসল চাষ করতে বিনামূল্যে সেচের পানি পাওয়া যায় না। বাড়তি টাকা দিয়ে কিনতে হয়। কৃষকরা যদি কোনো সুবিধা না পান, তাহলে খাল ও প্রকল্প রেখে লাভ কী?

একই এলাকার কৃষক আমজেদ হোসেন বলেন, কৃষক যাতে বিনামূল্যের পানি পেয়ে ফসল উৎপাদন করতে পারে, সে জন্য খালগুলোতে নিয়মিত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমবে, লাভবান হবে কৃষক। 

শৈলকুপার কর্মরত পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী বিকর্ণ দাস বলেন, অনেক খালের তলদেশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে, ফলে মাঠের জমির থেকে খালের তলদেশ নিচু হওয়ায় পানি মাঠে যায় না। খালগুলো সংস্কারে একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।  প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলই কাজ শুরু হবে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের