
গতিশীল রাজস্ব ব্যবস্থা গড়তে বরাবরই উপেক্ষিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কারের উদ্যোগ। শতভাগ অটোমেশন, স্বচ্ছ আদায় পদ্ধতির মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়নি অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তারাদের যোগসাজশে। সবশেষ, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ চালুর পর, রাজস্ব কার্যক্রম অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচিতে তৎপর ছিলো ওই গ্রুপটিই। সবমিলিয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে বহুকালের এই অচলায়তন ভাঙতে দেখা যাচ্ছে না আশার আলো।
আওয়ামী আমলের দেড় দশকে সাড়ে ছয় শতাংশের গড় প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু, তার প্রতিফলন ছিল না রাজস্ব আয়ে। অন্যদিকে, জনগণ টাকা দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু অভিযোগ- তার পুরোটা জমা হয় নি সরকারি কোষাগারে। যার ফলে, বিশ্বের সবচেয়ে কম কর আহরণে শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশ। এমন সব দুর্নামের তকমা নিয়ে যুগের পর যুগ এক রকম জোড়াতালি প্রক্রিয়ায় চলছিল এনবিআর।
ফলে, প্রয়োজনীয় সংস্কার আর ঢেলে সাজানোর চাহিদা ছিল চারদিক থেকেই। কিন্তু, অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে তাতে হাত দিতেই যেনো ফুঁসে উঠলো স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী। যারা নানা অজুহাতে সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে পুরো অর্থনীতিকে ফেলে দিয়েছে নতুন সংকটে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতো প্রয়োজন, চাহিদা আর যৌক্তিক একটি উদ্যোগে কেনো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশেষ স্বার্থন্বেষী মহল?
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারের অধ্যাদেশ যে প্রয়োজন ছিল সেটি এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জানে। তারা এটিকে অস্বীকার করবে না। অধ্যাদেশের বাস্তবায়নটা যাতে এগিয়ে যায়, সেদিকেই সরকারের কাজ করা দরকার।
রাজস্ব আহরণে চরম দুরবস্থা আর অদক্ষতার খেসারত দীর্ঘদিন ধরেই দিচ্ছে পুরো বাংলাদেশ। যে কারণে, সম্ভব হচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। আর বাজেট কিংবা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে ধারকর্যের ওপর। অর্থাৎ, সম্ভাবনা থাকার পরও কেবল রাজস্ব বিভাগের অদক্ষতায় মনোযোগ বাড়াতে হচ্ছে ঋণনির্ভর পরিকল্পনায়। এমন বাস্তবতা থেকে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে অপরিহার্য ছিল নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগকে আলাদা করা। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত স্বার্থন্বেষী মহলের চাপ এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সায় দেবে কি না- সেই প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ছিল- দুই বিভাগে এনবিআরের ভিতর থেকে নিয়োগ দিতে হবে। সেটি অধ্যাদেশে পরিষ্কার বলা হয়নি। সেখানে যেভাবে লিখা হয়েছে, এতে প্রশাসনিক ক্যাডারের আধিপত্যের দরজা খোলা আছে। সেটি যদি মেইন ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে আন্দোলন হওয়ার কথা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে।
সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হলে বিশেষ গোষ্ঠী হারাবে অনৈতিক আয়ের সুযোগ। আর সে কারণেও এমন আন্দোলন বলে মনে করেন অনেকে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম