বিশ্বে নারী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ জরায়ুমুখের ক্যান্সার। এ ক্যান্সারে প্রতি ২ মিনিটে মারা যাচ্ছেন একজন নারী। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)-এর পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নারী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন যার মধ্যে মারা যান সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি।
জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য হিউম্যান পিপল অব ভাইরাস বা এইচপিভি ৯৯ শতাংশ দায়ী বলে জানালেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দিপি বড়ুয়া। দিপি বড়ুয়া বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার নারীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে, যাদের স্বামী একাধিক বিয়ে করেছে বা অল্প বয়সের যদি মেয়েদের বিয়ে হয় জরায়ুমুখের কোষগুলি পরিপক্ক হওয়ার আগেই যৌন মিলনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কোষগুলোতে বিভিন্ন রকম ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, মেয়েদের ছোট বেলা থেকে ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে জানাতে হবে অভিভাবকদের। মাসিকের সময় পরিষ্কার কাপড় বা প্যাড ব্যবহার করার জন্য বলতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের গাইনোকোলজিস্ট বিভাগের অধ্যাপক ফাওজিয়া হোসাইন বলেন, সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার দেখা যায় তবে ইদানিং কালে দেখা যাচ্ছে ২৫ এর কোঠায় অনেক নারী জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। উপসর্গগুলো হচ্ছে, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, সহবাসের পর রক্তক্ষরণ, দুর্গন্ধ যুক্ত সাদাস্রাব, তল পেতে ব্যথা। মূল কথা জরায়ুমুখ ক্যান্সার একটি যৌনবাহিত রোগ।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায় জানিয়ে তিনি বলেন, "৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশরীদের যদি আমরা টিকা দেই তাহলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। টিকা দিলেও কিন্তু স্ক্রিনটেস্ট করতে হবে। সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে যদি এটা আমরা প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে কিন্তু এটা আর ক্যান্সার পর্যন্ত যাবে না।"
বিষয়টি নিয়ে জরায়ুমুখ ক্যান্সারজয়ী এক নারী বলেন, যখন তার উপসর্গ দেখা দেয় তখন তিনি চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক কিছু টেস্ট দেয় এবং ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেপ বাই স্টেপ চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এখন তিনি খুব ভালো আছেন এবং ফলোআপ চলে তিন মাস পর পর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে রোগটি নির্ণয় করা গেলে ৮০ থেকে ৯৬ ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক শিক্ষা।
রেডিওটুডে নিউজ//ইকে