বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করাসহ ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীরা। তাদের দাবি, টানা আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির পরও কোনো প্রজ্ঞাপন আসে নাই।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল গেটে তারা অবস্থান করেন। এসময় অন্তত পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্য সহকারীকে অংশ নিতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য, নিয়োগবিধি সংশোধন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদাসহ ন্যায্য দাবি মানতে কর্তৃপক্ষের টালবাহানা আর সহ্য করতে রাজি নন তারা। আন্দোলনকারীদের ভাষায়, ২৭ বছর ধরে আশ্বাসে বেঁধে রাখা হয়েছে, এবার আর ফিরে যাওয়া নয়। আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া এই সংকটের কোনো সমাধান নেই।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর কিছুই করেননি।
‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না,’ বলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সহকারীদের আন্দোলনের কারণে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সময়মতো টিকা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন অসংখ্য মা ও শিশু।
এ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীদের দাবি, স্বাস্থ্য সহকারীরা কখনোই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকাসেবা বন্ধ করতে চাননি। বরং কর্মকর্তাদের অবহেলা ও বৈষম্যের কারণেই তারা কর্মবিরতিতে বাধ্য হয়েছেন।
‘যদি দেশের মা-শিশুর টিকা ঝুঁকিতে পড়ে, তার দায় আমাদের নয়। দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের,’ বলেন মঞ্জুরুল ইসলাম।
আন্দোলনকারীরা মনে করিয়ে দেন, তাদের হাতেই বাংলাদেশ বিশ্বে টিকাদানের রোল মডেল হয়েছে। নবজাতক থেকে কিশোর– সব বয়সের শিশুদের হাম-রুবেলা, পোলিও, কোভিড, জরায়ুমুখ ক্যান্সার (এইচপিভি), টাইফয়েড (টিসিভি)– সব ধরনের টিকা মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারীরাই। গুটি বসন্ত নির্মূল, পোলিও দমন, মাতৃ-শিশু মৃত্যুহার কমানো– এসব সাফল্যের পেছনেও অবদান তাদের।
‘আমাদের কাজেই দেশের গড় আয়ু বেড়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান পেয়েছে কিন্তু আজও আমরা বৈষম্যের শিকার,’ অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
তাদের ৬ দফা দাবি–
১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান।
২. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেড ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান।
৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা।
৪. প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্তি।
৫. বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণে টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল যুক্ত করা।
৬. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি দেওয়া।
এর আগে গত অক্টোবরে একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছিলেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তখন আন্দোলন স্থগিত হলেও দাবি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না থাকায় তারা আবার কঠোর কর্মসূচিতে গেছেন।

