
যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগির কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশকে নতুন শুল্কহার জানিয়ে দেবে দেশটি। এসব শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। রোববার (৬ জুলাই) এসব কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিন নিউ জার্সিতে গলফ খেলে ওয়াশিংটন ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্তের পথে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যেসব দেশ চুক্তি করতে ব্যর্থ হবে, তাদের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসবে।
ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন সোমবার (৭ জুলাই) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের কাছে চিঠি পাঠানো শুরু করবে, যাতে নতুন শুল্কহারের কথা জানানো হবে। ‘১২ কিংবা ১৫টা চিঠি হতে পারে,’ বলেন তিনি। ‘আমরা কিছু চুক্তিও করেছি। কিছু চিঠি, কিছু চুক্তি—দুটোর সমন্বয় হবে।’
ট্রাম্প এর আগে ৯ জুলাই পর্যন্ত ৯০ দিনের শুল্কবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সময়সীমা ঘিরে জল্পনা ছিল যে, নতুন শুল্ক এই সপ্তাহেই কার্যকর হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিজেই বিভ্রান্তিকরভাবে বলেন, ‘শুল্ক তো থাকবেই… আমি মনে করি, ৯ জুলাইয়ের মধ্যে বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাবে… হয় চিঠি, নয়তো চুক্তি।’। এখন নতুন সময়সীমা অনুযায়ী, উচ্চহারে শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
বিভ্রান্তি কাটাতে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। তবে প্রেসিডেন্ট এখনই চিঠি পাঠানো ও চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছেন।’
ইইউর সঙ্গে সম্ভাব্য সমঝোতা
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র পুরো সপ্তাহান্তে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। আশা করা হচ্ছে, ৯ জুলাইয়ের আগেই উভয় পক্ষ একটি নীতিগত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইয়েনের সঙ্গে ট্রাম্পের রবিবারের আলাপ ‘গঠনমূলক’ ছিল বলে জানানো হয়েছে।
ইইউ মুখপাত্র ওলোফ গিল বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চাই। শুল্ক এড়াতে চাই, কারণ এগুলো উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। আমরা চাই জয়-জয় পরিস্থিতি, হার-হার নয়।’
ব্রিকস দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত শুল্কের হুমকি
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোটের বিরুদ্ধে ট্রাম্প আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি হুমকি দেন, “যেসব দেশ ব্রিকসের মতো আমেরিকাবিরোধী নীতিকে সমর্থন করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে। কোনো দেশ এর ব্যতিক্রম হবে না।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এর জবাবে বলেন, ‘শুল্ককে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাকে আমরা সমর্থন করি না। এতে কেউই লাভবান হয় না।’
শেয়ারবাজার ও পণ্যমূল্যে প্রভাব
এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই সূচক ০.৩% এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সূচক ০.৭% কমে গেছে। ইউরোপীয় বাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে—যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ০.৩% কমেছে, তবে জার্মানির ড্যাক্স সূচক ০.৩% বেড়েছে।
শিল্প খাতের ধাতুগুলোর দামও পড়েছে। লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে কপারের দাম ০.৬% কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি টনে $৯,৮০৮। অ্যালুমিনিয়ামের দাম ১.১% কমে $২,৫৬১ হয়েছে।
ছোট দেশগুলোর জন্য নতুন চিঠি
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, যেসব ছোট দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য নেই, তাদেরকেও শিগগিরই শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে। এই হার ২ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়েছিল, তবে পরে ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম