
গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌযান বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এর একটি ছাড়া সব নৌযান ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আটক করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, এথেন্স, বুয়েনস আয়ার্স, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদে। বিক্ষোভে শহরগুলোর লাখো ফিলিস্তিনপন্থি অংশগ্রহণ করেন। খবর আল জাজিরার
দুর্ভিক্ষকবলিত গাজায় ত্রাণবাহী নৌবহরকে পৌঁছতে না দেওয়া এবং অধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের আটকের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, ফ্রান্সের প্যারিসে। বিক্ষোভ হয়েছে জর্ডান ও তিউনিসিয়ার তিউনিস শহরেও।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারাও। প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের ছিল, কেউ সরাসরি নিন্দা জানিয়েছেন; আবার কেউ আটক নাগরিকদের জন্য কনস্যুলার পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানিজ।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি, আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকসিম প্রেভো সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
বিক্ষোভ হয় মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে
বিক্ষোভ হয় মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এই বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এই বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়।
গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে বাধা ও অধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের আটকের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো-
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণ ও আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধ চলাচলের অধিকার আছে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বীকৃত তাদের এই চলাচলের স্বাধীনতায় ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের এই হস্তক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে ‘গণহত্যা চালানো নেতানিয়াহু সরকারের ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতি, যা গাজাকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যা শুধু ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়’।
মালয়েশিয়া
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার জন্য ‘‘সব বৈধ ও আইনানুগ ব্যবস্থা’’ নেওয়া হবে। ইসরায়েল শুধু ‘‘ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করছে না; বরং বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের বিবেককেও পদদলিত করছে’’।’
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নৌবহরে অংশগ্রহণকারীদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি নকোসি জুয়েলিভেলিলে ম্যান্ডেলাও রয়েছেন।
এক বিবৃতিতে সিরিল রামাফোসা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলকে আহ্বান জানাচ্ছে যেন নৌবহরে থাকা জীবনরক্ষাকারী পণ্য গাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। কারণ, এই নৌবহর গাজার প্রতি সংহতির প্রতীক, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের নয়।
কলম্বিয়া
প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এক্সে ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তার সরকার ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করছে এবং কলম্বিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করছে।
গুস্তাভো পেত্রো বলেন, তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের জন্য কলম্বিয়াকে ‘ইসরায়েলি আদালতের মাধ্যমেও সব ধরনের উপযুক্ত দাবি জানাতে হবে’।
ইতালি
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল তাকে আশ্বস্ত করেছে যে নৌবহরের বিরুদ্ধে ‘কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড’ চালানো হবে না।
ইতালীয় ইউনিয়নগুলো আলাদাভাবে আগামীকাল শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, যা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ও গাজার প্রতি তাদের সংহতি প্রদর্শন করবে।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, নৌবহরকে ইসরায়েলের বাধা দেওয়া নিয়ে তারা ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ এবং এতে ‘অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে’ তারা যোগাযোগ রাখছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, নৌবহরে থাকা ত্রাণ মানবিক সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করা উচিত, যাতে তারা নিরাপদে গাজায় পৌঁছে দিতে পারে।
গ্রিস
গ্রিস এই সপ্তাহের শুরুতে ইতালির সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা ইসরায়েলের প্রতি ‘গাজামুখী নৌবহরে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করার আহ্বান জানায়।
আয়ারল্যান্ড
আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় অপরিহার্য ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। এই মানবিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের সবার এবং যেসব দেশ থেকে তাঁরা এসেছেন, সেসব দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’
পাকিস্তান
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নৌবহরের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘নৃশংস আক্রমণ’ আখ্যা দিয়ে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বর্বরতা বন্ধ করতে হবে, শান্তিকে সুযোগ দিতে হবে এবং সহায়তা অবশ্যই গাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।
বেলজিয়াম
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকসিম প্রেভো ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার প্রথম অগ্রাধিকার হলো বেলজিয়ামের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত দেশে ফেরানো।
ফ্রান্স
ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন নৌবহরে অংশগ্রহণকারী ফরাসি নাগরিকদের কনস্যুলার পরিষেবা দেওয়া হয় এবং ‘কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ছাড়াই তাঁদের ফ্রান্সে ফিরতে দেওয়া হয়’।
যুক্তরাষ্ট্র
এ সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসের ২০ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য হোয়াইট হাউসকে নৌবহর রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেছেন, এ ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে ফ্রানচেসকা বলেন, ‘ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে প্রাণ বাজি রাখা মানুষদের অপহরণ করছে তারা আর গাজার মানুষ রয়ে গেছে মৃত্যুপুরীতে। পশ্চিমা সরকারগুলোর নীরবতা ও সহযোগিতাই এখানে লজ্জাজনক।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম