
বর্তমান সময়ে অনেকেই ফ্যাটি লিভার বা লিভারের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়। আর এটা খুবই নীরবে হয় তাই আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই বুঝতেই পারেন না। তবে এতো ঘাবড়ে যাওয়ার দরকার নেই কারণ সচেতন হলে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি কিছু কার্যকর পানীয় লিভার স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। টাইমস অব ইন্ডিয়ান প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা ১০টি প্রাকৃতিক পানীয়র বিষয়ে কথা বলেছেন যা সত্যিই আপনার লিভারের জন্য উপকারী।
১. কফি: লিভারের জন্য কফি সত্যিই ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পানকারীদের মধ্যে সিরোসিস বা ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি কম। কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, প্রদাহ কমায় এবং লিভারে চর্বি জমা রোধ করে। দিনে ২–৩ কাপ কালো কফি যথেষ্ট। তবে চিনি, ক্রিম বা সিরাপ এড়িয়ে চলুন।
২. হলুদ দুধ: ইনস্টাগ্রামের ‘গোল্ডেন মিল্ক’ আসলে বেশ উপকারী। হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন লিভারের চর্বি কমায়, এনজাইম ব্যালান্স করে ও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়। ১ কাপ বাদাম বা লো-ফ্যাট দুধে আধা চা চামচ হলুদ ও এক চিমটি গোলমরিচ মিশিয়ে গরম করে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে পান করুন।
৩. আমলকীর জুস: আমলকী লিভারের জন্য এক অসাধারণ টনিক। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ এই ফল কোলেস্টেরল কমায়, চর্বি জমা রোধ করে ও ডিটক্স এনজাইম সক্রিয় করে। সকালে খালি পেটে ২ টেবিলচামচ আমলকীর জুস আধা গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। বাজারের চিনিযুক্ত সংস্করণ থেকে দূরে থাকুন।
৪. গ্রিন টি: গ্রিন টির ক্যাটেচিন যৌগ, বিশেষ করে ইজিসিজি, লিভারের প্রদাহ কমাতে ও চর্বি হ্রাসে সাহায্য করে। ১ চা চামচ গ্রিন টি পাতা গরম পানিতে ২–৩ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। দিনে ২–৩ কাপ যথেষ্ট। মনে রাখবেন, “গ্রিন টি লাটে” নয় সাধারণ চা-ই আসল ওষুধ।
৫. বিটরুটের জুস: বিটরুটে থাকা বিটালেইন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি পিত্ত নিঃসরণ বাড়ায়, যা চর্বি হজমে গুরুত্বপূর্ণ। ১টি ছোট বিটরুট, ১টি গাজর বা আধা আপেল দিয়ে জুস বানান। ঠান্ডা করে এক ফোঁটা লেবুর রস মেশালে স্বাদ ও উপকার দুটোই বাড়ে।
৬. লেবু পানি: প্রতিদিন সকালে গরম লেবু পানি খাওয়ার অভ্যাস সত্যিই কার্যকর। এটি লিভারের এনজাইম সক্রিয় করে, টক্সিন বের করে ও ভিটামিন সি সরবরাহ করে। আধা লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। চাইলে এক ফোঁটা মধু দিতে পারেন। তবে মিষ্টি লেমনেড নয়!
৭. অ্যালোভেরা জুস: অ্যালোভেরা শুধু ত্বকের যত্নেই নয়, লিভারের জন্যও দারুণ। এটি প্রদাহ কমায়, হজম উন্নত করে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ১–২ টেবিলচামচ ফুড-গ্রেড অ্যালোভেরা জুস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খাবারের আগে পান করুন।
৮. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার: এই জনপ্রিয় পানীয় ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে—যা লিভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১ টেবিলচামচ কাঁচা, আনফিল্টারড অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খান, খাবারের আগে। সরাসরি খেলে মুখ ও গলা পুড়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
৯. ধনেপাতার পানি: ধনেপাতার বীজে রয়েছে ডাইইউরেটিক ও প্রদাহনাশক উপাদান। আয়ুর্বেদে এটি একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১ চা চামচ ধনেপাতার বীজ রাতে এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে ছেঁকে পান করুন।
১০. ডাবের পানি: ডাবের পানি লিভার সরাসরি “ফ্যাট বার্ন” না করলেও, এটি লিভারকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। হাইড্রেশন বজায় রাখে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স রাখে। দিনে ১ গ্লাস টাটকা ডাবের পানি যথেষ্ট বিশেষ করে গরমে বা ব্যায়ামের পর।
সতর্কতা ও টিপস
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। চিনি, অ্যালকোহল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন কারণ এটাই আসল ডিটক্স।
- ওষুধ খেলে বা লিভারের রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- নিয়মিততা গুরুত্বপূর্ণ একদিনের হলুদ দুধে লিভার “ডিটক্স” হবে না।
লিভার আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের একটি। কিন্তু যখন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হবেন তখন শরীরে নানান রোগে ভুগতে হবে। সে কারণেই চিকিৎসকরা লিভার সুস্থ রাখতে পরামর্শ দেন। আর ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলেও সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে সমাধান মিলবে। প্রাকৃতিক পানীয়গুলোও দারুণ ভুমিয়া রাখে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে। তবে সবার শরীরের এক নয় সে কারণে। আপনার জন্য কোন পানীয়টি সঠিক সেটা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই ভালো।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম