
পূজার ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে খাবার তালিকা থেকে বাদ রাখেননি কোনো কিছুই। আর এর জেরে অনেকেরই ওজন বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত ওজন শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই দৈনন্দিন কাজকর্মে মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন কমাতে পারেন আপনিও।
জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঠিক সংমিশ্রণে এক মাসে ৩ কেজি ওজন কমাতে সক্ষম হবেন আপনি। সে জন্য স্থায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তন গ্রহণ করা উচিত। এটি আপনার খাদ্যাভ্যাস উন্নত করবে, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।
এখানে দৈনন্দিন রুটিনে ৩টি পরিবর্তনের কথা বলা হলো, যা ১ মাসে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন কমাতে পারে।
অবশ্যই, এগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা উচিত এবং আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার পরে। আপনার উচ্চতা যদি হয় ৫ ফুট হয়, তাহলে ওজন ৪৪ থেকে ৫৫.৭ কেজির মধ্যে হওয়া উচিত। তবে বয়স ও লিঙ্গ অনুসারে কমবেশি হতে পারে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার
যারা প্রোটিন-ভিত্তিক নাশতা দিয়ে দিন শুরু করেন, তারা বেশি তৃপ্তি অনুভব করেন, যার ফলে প্রতিদিনের খাবার গ্রহণ কম হয়।
প্রোটিনের কারণে আপনার শরীর দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণতা বজায় রাখে, যার ফলে পরবর্তী খাবার এবং নাস্তার সময় খাবার গ্রহণ কমে যায়।
প্রোটিন-ভিত্তিক নাস্তায় ডিম, দই ও ফলের সঙ্গে মিশ্রিত প্রোটিন পাউডার থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নাশতায় প্রোটিন খাওয়া বিপাকীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, একই সঙ্গে শরীরের টিস্যুতে চর্বি ভাঙন দ্রুত করে।
একটি স্বাস্থ্যকর নাশতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা মানুষকে অস্বাস্থ্যকর খাবারের আকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত রাখে। একটি প্রোটিন-ভিত্তিক নাশতায় সুষম খাদ্যাভ্যাস অর্জনের জন্য গোটা শস্য ও ফল অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত পানি
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। মানবদেহ তার বিপাকীয় হার বাড়াতে পানি ব্যবহার করে, যার ফলে ক্যালরি পোড়ানোর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
খাবারের আগে এক গ্লাস পানি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে। হাইড্রেটেড থাকার ফলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য আপনার শরীর আরো শক্তি পায়।
আপনার দৈনিক পানি গ্রহণ ৮ গ্লাস হওয়া উচিত। অন্যদিকে ক্যালরি গ্রহণ এড়াতে আপনার সমস্ত চিনিযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে পানি খাওয়া উচিত। আপনার শরীর বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে পানি ব্যবহার করে, একই সঙ্গে এটি আপনার স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং পেট ভরা অনুভূতি তৈরি করে খিদে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ব্যায়াম
ওজন কমানো ও সুস্থতা বজায় রাখার জন্য শারীরিক ব্যায়াম একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ওজন কমাতে সাহায্য করে। জাম্পিং জ্যাক ও প্ল্যাঙ্কের মতো ঘরোয়া ব্যায়াম, হাঁটা ও সাইকেল চালানোর সঙ্গে সঙ্গে, পেশি ভর তৈরির পাশাপাশি ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
সকালের ব্যায়াম আপনাকে সারা দিন রক্তে শর্করার মাত্রা ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ছোট ব্যায়াম সেশনের মাধ্যমে মানুষ তাদের ওয়ার্কআউট রুটিন আরো ভালোভাবে বজায় রাখে। কারণ এই সেশনগুলো তাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন সময় স্লটের সঙ্গে খাপ খায়।
খাবার নির্বাচন থেকে শুরু করে খাওয়ার কৌশল পর্যন্ত, সম্পূর্ণ খাওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ প্রয়োজন। এই কৌশলটি আপনার শরীরের ক্ষুধা ও পেট ভরা অনুভূতির সংকেত শনাক্ত করতে সাহায্য করে। আর এটি আপনার অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে।
খাওয়ার সময় ফোন বা টেলিভিশনে চোখ থাকলে খাবার সম্পূর্ণরূপে অনুভব করা যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, মননশীলতা অনুশীলনের ফলে অতিরিক্ত খাবার/আবেগজনিত খাবার খাওয়ার ঘটনা কম হয়, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। ছোট প্লেট ব্যবহার ও খাবারের পরিমাণ পরিমাপ আপনার খাবারের আকার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। যা আপনাকে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ থেকে বিরত রাখে।
ওজন কমানোর সাফল্যের জন্য সঠিক ঘুমের মান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বেশিরভাগ মানুষই অবমূল্যায়ন করে। অপর্যাপ্ত ঘুম ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রক হরমোনগুলোকে ব্যাহত করে। যার ফলে মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকাঙ্ক্ষাকে আরো তীব্র করে তোলে। সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য আপনাকে প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ ঘুমে কাটাতে হয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম