মঙ্গলবার,

২৩ এপ্রিল ২০২৪,

১০ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গলবার,

২৩ এপ্রিল ২০২৪,

১০ বৈশাখ ১৪৩১

Radio Today News

শুভ জন্মদিন, হাসু আপা

সানজিদা যূথী

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ০৭:২২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

Google News
শুভ জন্মদিন, হাসু আপা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মধুমতির কোল ঘেসে ছোট্ট গ্রাম টুঙ্গীপাড়া। সবুজে শ্যামলে ঘেরা সেই গ্রামেরই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৭ সালে আজকের এই দিনে (২৮ সেপ্টেম্বর) জন্ম নেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান যিনি দেশবাসীর কাছে পরিচিত "হাসু আপা" নামে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব দম্পতির প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। বাবার মতো মানুষের মন জয় করার অসীম ক্ষমতা আর মার মতো ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতা নিয়ে বেড়ে উঠেন শেখ হাসিনা।

১৯৬৫ সালে রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্টিক পাস করেন।বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।  ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতেন গল্পের বই পড়তে,গান শুনতে আর ছবি আঁকতে। বন্ধুমহলে সবার মধ্যমনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। পরোপকারী ও তুখোড় মেধাবী শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকেই নিজের ব্যাপারে বেখেয়ালী হলেও অপরের যেকোন সমস্যায় ছুটে যেতেন সবার আগে.।

যে বয়সে বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে শেখ হাসিনা মায়ের হাত ধরে জেলখানায় যেতেন বাবাকে দেখতে মুলত ঐ সময় থেকেই বিশ্ব এই নেতার রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৬৭ সালে ১৭ই নভেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতার তত্ত্বাবধায়নে  পরমানু বিজ্ঞানী ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। দুইজনই বর্তমানে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।  ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা। সেসময় পশ্চিম জার্মানিতে থাকার সুবাধে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।  ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন তার পিতার হাতেগড়া দলটির। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। সেই থেকে দলটিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন জাতির পিতার যোগ্য সন্তান, দেশের ক্লান্তিলগ্নের  আশ্রয়স্থল  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এর মধ্যে তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ ও ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। সর্বপ্রথম  ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে ২০০৮,  ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৭ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন তিনি।

গত ১৪ বছর ধরে  শেখ হাসিনা দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এসময় ক্ষমতায় থেকে তিনি জাতির পিতা হত্যাকান্ডের বিচার করেছেন। ফাঁসি কাষ্টে ঝুঁলিয়েছেন একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধীদের। বিচক্ষন ও দূরদর্শী নেতৃত্বে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান ছিলো তার দৃঢ় মনোবল ও সাহসের উদাহরণ। কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্পের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। পিতার মতো ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন সবার প্রিয় হাসু আপা। বার বারই তিনি বলেন ,প্রধামন্ত্রীত্ব তার দরকার নেই, দরকার দেশের মানুষের ভালবাসা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চান সুউচ্চতায়।

শুধু শহরে নয়,গ্রামাঞ্চল সর্বদা বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছে তাঁর সরকারের সময়। কমিউনিটি ক্লিনিক ও আশ্রয়ন প্রকল্প তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তার ফসল। প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশের মানুষের কথাই ভাবেন না। তিনি যেন শান্তির প্রতীক,তিনি মানবিকতার প্রতীক। তাঁর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া। মানবিকতার ফলস্বরুপ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অনেক পদক। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত তিনি " মাদার অফ হিউমিনিটি " নামে। শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন। তিনি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৭ সালে তিনি ছিলেন ৩০ তম। ২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন।

স্বজনহারানোর শোক নিয়ে কোটি বাঙ্গালির মাঝে যেনো শেখ হাসিনা খুঁজে ফেরেন তাঁর প্রিয়জনদের মুখ। শোক কে শক্তিতে পরিণত করে ছুটছেন দুর্বার গতিতে। সেই গতি থামিয়ে দিতে কুচক্রিমহল অনেকবার আক্রমণ করেছে তাঁর উপর। সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় আর দেশবাসীর ভালোবাসা ও দোয়া থামাতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কন্যার পথযাত্রাকে। প্রায়ই তিনি বলেন তার হারাবার কিছু নেই। শুধু দিতে চান দেশকে ,দেশবাসীকে।মৃত্যূভয়কে পায়ে  ঠেলে জীবনের জয়গান গেয়ে এগিয়ে চলেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার ,বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে সহ যোদ্ধা বানিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘ভিশন ২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ মহাপরিকল্পনা (ডেল্টা প্লান ২১০০) গ্রহণ করেছেন।

শুধু দেশ নয় বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের অনুপ্রেরণার এক নাম শেখ হাসিনা। জন্মদিনের নিরন্তর শুভকামনা ও ভালোবাসা ধন্য পিতার ধন্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এমএমএস

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের