শুক্রবার,

০৪ জুলাই ২০২৫,

১৯ আষাঢ় ১৪৩২

শুক্রবার,

০৪ জুলাই ২০২৫,

১৯ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

যৌতুকের নির্যাতনে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না নারীরা

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ৩ জুলাই ২০২৫

Google News
যৌতুকের নির্যাতনে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না নারীরা

যৌতুকের দাবিতে স্বামী বা স্বামীর পরিবারের সদস্যের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলেও এখন থেকে সব ক্ষেত্রে আর সরাসরি মামলা করতে পারবেন না নারীরা। সংশোধিত আইনে নির্ধারিত কিছু পরিস্থিতিতে মামলা করার আগে নির্যাতিত নারীকে বাধ্যতামূলকভাবে সালিসের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। ১ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় এই অধ্যাদেশটি প্রকাশ করে।

নারী নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে এমন সময়ে আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নেয়া হলো, যখন দেশে এ ধরনের অপরাধের হার ক্রমশ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের মতে, এই বিধান ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ আরও কঠিন করে তুলবে এবং সমাজে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নারীর মামলায় কোনো বাধা নেই। তবে নির্যাতন ও আঘাতের মাত্রা বিবেচনায় ভিন্ন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারার অপরাধের ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারীকে মামলার আগে মধ্যস্থতার পথে হাঁটতে হবে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীকে সাধারণ জখম (simple hurt) করলে তার শাস্তি অনধিক পাঁচ বছর, কিন্তু অন্যূন দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড। উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও হবে।

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারী সরাসরি মামলা করতে পারবেন না। তাকে প্রথমে লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছে আবেদন করতে হবে। সেখানে মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে যেকোনো পক্ষ মামলা করতে পারবে।

আইনের এই পরিবর্তনের ফলে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

ইশরাত বলেন, ‘নারীদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি করা হয়। এখন যদি নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আদালতে এসে মামলা করতে না পারেন, তাহলে নারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার পাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। এতে নারীদের ওপর নির্যাতন আরও বাড়বে। বাড়বে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অস্থিরতাও।’

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ।

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১০৯ হেল্পলাইনে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৬ ফোনকল আসে। ২০২৪ সালে পারিবারিক সহিংসতা-সম্পর্কিত ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৮টি ফোনকল আসে।

বাংলাদেশে উন্নত দেশের মতো আইনি সহায়তার কাঠামো গড়ে না ওঠায় সরাসরি মামলা থেকে নির্যাতিত নারীকে বাধা দেওয়া হলে আইনি প্রতিকার থেকে তারা বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল।

এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা যদি আদালতে গিয়ে সরাসরি আইনি প্রতিকার না পায় তাহলে নারী নির্যাতনের ঘটনা আরও বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত দেশে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে যেভাবে সেবা দেওয়া হয়, বাংলাদেশে সেই কাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। তাই বিকল্প প্রতিকারের ব্যবস্থা না রেখে এভাবে সরাসরি আইনি প্রতিকার থেকে নারীদের বঞ্চিত করা হলে সমস্যা কমবে না।’

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের