
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের এক অকাট্য দলিল। বুধাবার (৩ আগস্ট) বাসসকে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা অবশ্যই শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল।’
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মঙ্গলবার জবানবন্দি দেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
সেসময় তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে ফোন করে জানান যে আন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তখন তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছিলেন এবং তার সামনে ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার। পরে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের এই নির্দেশনা তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ সারাদেশে পৌঁছে দেন প্রলয় কুমার। সেদিন থেকেই মারণাস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়।
চৌধুরী মামুন আরও জানান, এই মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর ও ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ ক্ষেত্রে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশ ছিল, যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে।
সাবেক আইজিপি তার জবানবন্দিতে বলেন, শেখ হাসিনাকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমাতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ। আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লক রেইড দিয়ে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করা হয়। আন্দোলন দমনে সরকারকে উৎসাহিত করেন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীরা।
জবানবন্দিতে ‘কোর কমিটি’র মিটিং বিষয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হত। সব বৈঠকেই আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হত। একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়।
ডিজিএফআই এই প্রস্তাব দেয় উল্লেখ করে মামুন বলেন, তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পরে রাজি হন। আর সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুনকে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই ও ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের ডিবিতে এনে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন সাবেক এই আইজিপি। তিনি জানান, ডিবির তৎকালীন প্রধান হারুনকে ‘জিন’ বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির বৈঠক সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি জানান, ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, এসবির প্রধান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এনএসআইয়ের প্রধানের সঙ্গে তিনিসহ মোট ২৭ জন উপস্থিত ছিলেন। জুলাই আন্দোলন দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরছিল। কিন্তু চারদিকে পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়।
তবে ওইদিন রাতে গণভবনে আবারও বৈঠক ডাকা হয় বলেও জবানবন্দিতে জানান সাবেক আইজিপি মামুন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের মহাপরিচালক ও সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমানসহ তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান ও এসবির প্রধান বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন।
ওই বৈঠকে ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে। ওই বৈঠক থেকে সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে যান বলে জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সেখানে (কন্ট্রোল রুম) তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের মহাপরিচালক, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এসবির প্রধান ও মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টায় সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুম থেকে তারা সবাই চলে যান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি জানান, সেদিন সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আমার দপ্তরে যাই। এর মধ্যে উত্তরা-যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পথ দিয়ে ছাত্র-জনতা স্রোতের মত প্রবেশ করতে থাকে। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে জানতে পারি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি কোথায় যাবেন তা জানতাম না। এরপর বিকেলে আর্মির হেলিকপ্টার এসে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে আমাকে প্রথমে তেজগাঁও বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে নিয়ে যাওয়া হয়। হেলিকপ্টারে আমার সঙ্গে এসবি প্রধান মনিরুল, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিব ও ডিআইজি আমেনা ছিলেন।
পরে হেলিকপ্টারে এডিশনাল ডিআইজি প্রলয়, এডিশনাল আইজি লুৎফুল কবিরসহ অন্যদেরও সেখানে নেওয়া হয়। পরদিন ৬ অগাস্ট আইজিপি হিসেবে তার নিয়োগ চুক্তি বাতিল করা হয় এবং ক্যান্টনমেন্টে থাকাকালে ৩ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান মামুন।
আন্দোলনের দিনগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৭ জুলাই আন্দোলন চলাকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আমরা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের পরিস্থিতি দেখতে যাই। পথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করি।
ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে একটি ভিডিও দেখান ওয়ারি জোনের ডিসি ইকবাল। ভিডিও দেখিয়ে ইকবাল বলেন যে, ‘গুলি করি, একজন মরে। সেই যায়। বাকিরা যায় না।’ পরবর্তীতে এই ভিডিও সারাদেশে ভাইরাল হয়।
২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে ছিলেন উল্লেখ করে জবানবন্দিতে আল-মামুন বলেন, তখন পুলিশের আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামশর্ও শেখ হাসিনাকে এই জাবেদ পাটোয়ারী দিয়েছিলেন বলেও দাবী করেন।
পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসি ল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং তারা সেটা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা এই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করেছেন, তাদের পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়।
২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, র্যাব সদর দপ্তর পরিচালিত উত্তরাসহ র্যাব-১ এর কার্যালয়ের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। র্যাবের অন্যান্য ইউনিটের অধীনেও অনেক বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী এবং সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটকে রাখা হত, যা একটা কালচারে (সংস্কৃতি) পরিণত হয়েছিল।
তার ভাষ্যমতে, অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মত কাজগুলো র্যাবের এডিজি (অপারেশন) এবং র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকেরা সমন্বয় করতেন। আর র্যাবের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত এবং এই নির্দেশনাগুলো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে আসত বলে জানতে পারেন বলেও জবানবন্দি দেন সাবেক আইজিপি।
সেসব নির্দেশনা চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপারেশন) ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো বলে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
ব্যারিস্টার আরমান আটক থাকার বিষয়টি তিনি আইজিপি’র দায়িত্ব গ্রহণের সময় জানানো হয় বলেও উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। তাকে তুলে আনা এবং গোপনে আটক রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের ছিল।
বিষয়টি জানার পর আমি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন, ‘ঠিক আছে, রাখেন। পরে বলব।’ কিন্তু পরে আর কিছু তিনি জানাননি। এরপর আমি কয়েকবার বিষয়টি তুলেছিলাম, কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের আদেশে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে উল্লেখ করে জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। জুলাই আন্দোলনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার জন্য আমি অপরাধবোধ ও বিবেকের তাড়নায় রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে আমি ট্রাইব্যুনালে স্বজন হারানোদের কান্না, আকুতি ও আহাজারি দেখেছি। ভিডিওতে নৃশংসতা দেখে অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত আমি যৌক্তিক মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মত বিভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে আমার দায়িত্বশীল সময়ে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর দায় আমি স্বীকার করছি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। আমি প্রত্যেক নিহতদের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন। আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত (বাঁচিয়ে রাখেন) দান করেন, বাকি জীবনে কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।
এদিকে, সাবেক আইজিপি’র জবানবন্দি দেওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রাজসাক্ষী হওয়া চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ক্ষমা পাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনাল নেবেন। তিনি নিজের বিবেকের তাড়নায় অপরাধ স্বীকার করেছেন। নিজের পক্ষ থেকে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছিলেন।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, বিশ্বের কোন আদালতেই এ সাক্ষ্যকে দুর্বল প্রমাণ করার সুযোগ নেই। এটি একটি অকাট্য অপ্রতিরোধ্য সাক্ষ্য। এটি শুধু জুলাই-আগস্টের ঘটনা নয়, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যত গুম-খুন হয়েছে তার বিরুদ্ধে অকাট্য দলিল হিসেবেও কাজ করবে।
ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন বিএম সুলতান মাহমুদ, প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটররা।
এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম