
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েমকে নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, সম্প্রতি একটা টকশোতে সাদিক কায়েম বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার। সাদিক কায়েম বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না। সে ৫ই অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে।
নাহিদ ইসলামের ফেসবুক পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে দেওয়া বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে তার (সাদিক) ভূমিকাকে খাটো করার অপচেষ্টা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং তা আন্দোলনের সৎ ইতিহাস রচনায় বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ আর দমন-পীড়নের মধ্যেও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তার ও তার সহযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলেও জানান জুলাই আন্দোলনের এই নেতা।
সাদিক কায়েম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমি আমার যতগুলো বক্তব্য রেখেছি, আপনারা যদি সেগুলো দেখেন; তাহলে দেখবেন আমি সব জায়গায়ই বলেছি, জুলাই বিপ্লবের যদি কোনো মাস্টারমাইন্ড থাকে, যদি কোনো নায়ক থাকে, তাহলে তারা হলেন আমাদের শহিদরা এবং আমাদের গাজীরা। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এ জুলাই বিপ্লব ছিল আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ। এখানে সব মতের মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত মতভেদ ভুলে গিয়ে একটি কমন লক্ষ্য, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য একত্রিত হয়েছিলেন।
সাদিক চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, যখন খুনি হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যায়, সেই সময় সরকার গঠন এবং পরবর্তী সময়ে, আমি কখনও ‘‘সমন্বয়ক’’ পরিচয়ে কোথাও গিয়ে কোনো কিছু দখল বা আত্মসাৎ করেছি, এমন একটি সিঙ্গেল ডকুমেন্টও কেউ দেখাতে পারবে না।’
শিবির নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে আমাদের মূল সারির যারা সমন্বয়ক ছিলেন, তারা যখন ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন, তখন আমি কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সত্য কিছু ঘটনা আমি মাঝেমধ্যে আমার আলাপে এনেছি। যখন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট হয়, কারফিউ জারি হয়, তখন সব কিছু বিচ্ছিন্ন ছিল। সেই সময় নয় দফা ফরমেশন, আমাদের দ্বিতীয় সারির সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের সেফ হাউজে রাখার ব্যবস্থা, পাশাপাশি সব মিডিয়া হাউজে নয় দফা পৌঁছে দেয়া; ১৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের কর্মসূচি প্রণয়ন এবং দেশি-বিদেশি অসংখ্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা—এসব করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো যদি জাতির সামনে না আসে, তাহলে ঐতিহাসিক বিকৃতি তৈরি হবে। এমন হাজারো ঘটনা রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি আমরা জানি। ইতিহাসের দায় থেকে আমরা আশা করবো—জাতি সবকিছু জানবে। ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, যারা ওই গুরুত্বপূর্ণ সময় ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত অনেকে ‘‘গুমের নাটক’’ করেছে, কেউ আত্মগোপনে ছিল, আবার কেউ আন্দোলন ম্যানেজ করে ক্যাম্পাস খোলার আন্দোলন করেছিল, তারা ৫ আগস্টের পর মহাবিপ্লবী হয়ে উঠেছে।’
সাদিকের কথায়, ‘৫ আগস্টের পর থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরজুড়ে আমরা আমাদের আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু একই সময়ে যারা সমন্বয়ক পরিচয়ে ছিল, তাদের দেখেছি দখলদারিত্ব নিয়ে ব্যস্ত। ৫ আগস্ট যেটা বলা হচ্ছে, তখন সব অংশীজনের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। সায়ের ভাইও সেখানে ছিলেন। আমি মাহফুজ আলমকে বলেছিলাম, সরকার গঠনের রূপরেখা কী হবে, যখন হাসিনা পালাবে। আমরা নিজেরাও বলেছিলাম, এক দফার ঘোষণা মাঠ থেকেই আসবে; কোনো সেনাবাহিনীর দপ্তর বা অন্য কোনো জায়গা থেকে নয়। সরকার গঠনের বিষয়টি আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘এখন এইভাবে দোষারোপ করা, ভিত্তিহীন কথা বলা, যখন আমাদের মূলসারির কিছু যোদ্ধা তা করছেন, তখন তা আমাদের ব্যথিত করে। আমরা আশা করবো, তারা যেহেতু এখন দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন, তারা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। এখন যেসব বয়ান তুলে ধরা হচ্ছে, তা সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে, বিভাজন তৈরি করছে। তবে কেউ যদি জুলাই নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, চেতনার রাজনীতি করতে চায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম