
নির্বাচনের আগে বিচার-সংস্কার ও লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছে এনসিপি।
আজ বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত দলটির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এনসিপির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের পূর্বেই সরকারের অবশ্যই পালনীয় কিছু জায়গা রয়েছে। গণহত্যাকারীদের বিচার করা এবং রাষ্ট্রকাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়ে এই সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। সুতরাং নির্বাচনের আগেই বিচারকে দৃশ্যমান করা এবং সংস্কারকে বাস্তবায়ন করা এই সরকারের অবশ্য কর্তব্য।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বহুল আকাঙ্খিত জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একইসঙ্গে জুলাই ঘোষণাপত্রে আরো কিছু বিষয় উল্লেখ থাকলে এটি আরো পরিপূর্ণ হতো। গত বছর আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হয়েছিলাম। সেখানে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণার বিষয়ে দাবি জানানো হয়েছিল। সরকার সময় চেয়েছিল, সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়েছে গতকাল। কিন্তু আমরা সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়েছিলাম— তার কিছু বিষয় ঘোষণাপত্রে অনুপস্থিত থেকে গেছে। এই ভূখণ্ডের উপনিবেশ-বিরোধী লড়াইয়েরর অন্যতম রেফারেন্স ১৯৪৭-কে এখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা মনে করি এই ভূখণ্ডের স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র পাওয়ার পেছনে ’৪৭, ’৭১ ও ’২৪-এর আন্দোলনের সকল কিছু সম্মিলন রয়েছে— এগুলো থাকলে ঘোষণাপত্র আরো সমৃদ্ধ হতো।’
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, ‘ঘোষণাপত্রে প্রায় ১ হাজার শহীদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের রিপোর্টেই ১৪শ শহীদের কথা বলা আছে; এগুলো আমাদের সবার জানা। সরকার যে গত এক বছর ধরে শহীদ ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে; তার একটা ছাপ আমরা এই ঘোষণা পত্রে দেখেছি। গত ১৬ বছরের যে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, ঘোষণাপত্রে তার অনেকগুলো বিষয় অনুপস্থিত থেকে গেছে।
তিনি বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, বিচারিক হত্যাকাণ্ড, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালের কোটার সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদের হত্যার বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন ও মোদী-বিরোধী আন্দোলনের কথা উল্লেখ থাকলে এই ঘোষণাপত্র পরিপূর্ণ হতে পারত। ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ আরো অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটা নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছি। গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটু সংবিধান পুনর্লিখনে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যও হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব বাস্তবায়নের পথ কী হবে— তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। ঘোষণাপত্রে নতুন সংবিধানের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এখনো দাবি জানাই— একটি নতুন সংবিধানই আমাদের জন্য সমাধান এবং সেই সংবিধানেই প্রস্তাবনার মধ্যেই জুলাইয়ের ঘোষণা পত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাই। জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের কার্যকারিতার ভিত্তিতেই সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম