
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।’
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র চর্চার লক্ষ্যে প্রচলিত এটি একটি বিশেষ দিন।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন একদলীয় বাকশালের আগ্রাসী থাবা থেকে। তাঁর কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মর্মমূলে ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র। আর প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তিই হচ্ছে মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অগ্রগামী করেছিলেন শহীদ জিয়ার চিন্তা ও দর্শনকে।
আর এ জন্য তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ের স্বৈরতন্ত্রের হিংস্র আক্রমণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই বারবার স্বৈরতন্ত্র হানা দিয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা, ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা ইত্যাদি অনাচার করা হয়েছে রাষ্ট্রশক্তিকে হাতের মুঠোয় নিয়ে। একটি ভীতিকর ও কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে।
গত দেড় দশক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আত্মপ্রকাশে গণতন্ত্র ছিল অবরুদ্ধ, বন্দি রাখা হয়েছিল সারা জাতিকে। গণতন্ত্রের নীতিমালা প্রচার ও সমুন্নত রাখার যেকোনো প্রচেষ্টাকেই পতিত আওয়ামী সরকার নির্দয়ভাবে প্রতিহত করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো একটি সর্বজনীন মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি, জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসর নির্ধারণে স্বাধীনভাবে প্রকাশিত ইচ্ছা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার এক নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ইতিহাসে এক ভয়ংকর স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। এখন তাই ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সব মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ।’
তারেক রহমান বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সমবেদনা জানান।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। তিনি বলেন, এই দিবসটি আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলাকে সমর্থন করে। এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন উৎসাহিত করা হয়। গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগে অংশ নিতে পারে, জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেবা ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়। গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকলে কোনো স্বৈরশক্তিই মাথাচাড়া দিতে পারে না, আর সে কারণে জনগণকে ক্রীতদাসে পরিণত করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, দেশবাসী ১৬ বছর এক ভয়াবহ দুর্দিন অতিক্রম করে গত বছর জুলাই-আগস্টে ঐতিহাসিক রক্তস্নাত আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করলেও এখনো পূর্ণ গণতন্ত্র আসেনি। অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সর্বজনীন শিক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয়।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম