তরুণ প্রজন্মের কাছে সাহিত্যিক ও গবেষক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান খুবই পরিচিত একটি নাম । তিনি ১৯৮৫ সালের ২৫ নভেম্বর পিরোজপুর সদর উপজেলার খানাকুনিয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান। মা জামিলা খাতুন। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠেন নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে। প্রাথমিক জীবনে তাঁকে দারুণ অর্থ কষ্টে ভুগতে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর একসময়ে আর্থিক সংকটে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তবুও তিনি হাল ছেড়ে দেন নি।
এক বছর শিক্ষা বিরতির পর ২০০৪ সালে পুনরায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০০৭ সালে জাতীয় দৈনিকে লেখার মধ্যদিয়ে ছাত্রজীবনেই প্রবেশ করেন লেখালেখির জগতে। কর্মজীবনে এসে তিনি প্রফেশনাল লেখক হিসেবে সাহিত্যের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠেন। দৈনিক ইত্তেফকের কঁচিকাচার আসর-এ লেখার মধ্যদিয়ে তার এই অগ্রযাত্রা শুরু হয়। এরপর আর তা থেমে থাকেনি। ২০১১ এর পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিষয়ে তাঁকে বেশ লেখালেখি করতে দেখা যায়।
এ সময়ে তিনি দৈনিক প্রথম আলোর পড়াশোনা, দৈনিক ইত্তেফাক এর অনুশীলন ও দৈনিক নয়া দিগন্ত এর সিলেবাস বিভাগে বেশ লেখালেখি করতেন। এ সময় থেকেই মূলত তিনি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ অনুভব করতে থাকেন। ধারাবাহিকভাবে লিখতে থাকেন একের পর এক গল্প। যা প্রকাশিত হয় দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রিয়জন বিভাগে। আস্তে আস্তে সাহিত্যের অঙ্গনে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ অসমাপ্ত তারুণ্যের গল্প। এরপর সূচীপত্র, পুথিনিলয় সহ বেশ কিছু প্রকাশনী থেকে তার অনেকগুলো গল্পের বই প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস মধ্যরাতের হাসি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।
একসময় তিনি লক্ষ্য করলেন যে, জাতীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিনগুলো গল্প ও প্রবন্ধের কলেবর অনেক ছোট হয়ে থাকে। তিনি সেভাবেই লিখেতে শুরু করলেন। একের পর এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে লাগল। এ পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত তার প্রবন্ধের সংখ্যা দুইশো এর অধিক। ঢাকা টাইমস, যুগান্তর, নয়া দিগন্ত, আমার সংবাদ, ইত্তেফাক, পার্স টুডে ও আমাদের সময় ডট কম সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের গণমাধ্যমে লেখালেখি করছেন। সাহিত্যের প্রতি তিনি প্রবল অনুরাগী সবসময়ই। যে কারণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ (মাস্টার্স) শেষ করার পরেও ২০১৯ সালে একই বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাহিত্যে এম.ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মাসিক অগ্রপথিকে তিনি নিয়মিত গল্প লিখতেন।
দৈনিক নয়া দিগন্তের দিগন্ত সাহিত্য, আগডুম-বাগডুম বিভাগেও তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন। লিখেছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের মাসিক প্রকাশনা অন্য এক দিগন্তে। শিল্প ও সাহিত্যের অন্যতম ম্যাগাজিন নতুন এক মাত্রা’য়। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাসিক শিশু পত্রিকায় তাঁর লেখা ‘স্বপ্নের খোঁজে’ গল্পটি পাঠককে বেশ আকৃষ্ট করে। প্রচারবিমুখ এই লেখক সবসময়ই থেকেছেন লোক চক্ষুর আড়ালে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত।
২০০৬ সালে তিনি রাহিমা খানম এর সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। তার লেখায় সমাজ পরিবর্তনের নানা সুর প্রতিধ্বনিত হয়। তিনি লেখায় সামাজিক অসঙ্গতির চিত্রগুলো তুলে ধরে এর কঠোর সমালোচনা করেন। মানুষকে আশাবাদী করে তোলাই একজন লেখকের বড় কাজ বলে তিনি মনে করেন।
রেডিওটুডে নিউজ/এমএস