বৃহস্পতিবার,

১০ জুলাই ২০২৫,

২৬ আষাঢ় ১৪৩২

বৃহস্পতিবার,

১০ জুলাই ২০২৫,

২৬ আষাঢ় ১৪৩২

Radio Today News

ফাঁস হওয়া অডিওতে হাসিনার গুলি চালানোর নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৯ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১১:০১, ৯ জুলাই ২০২৫

Google News
ফাঁস হওয়া অডিওতে হাসিনার গুলি চালানোর নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি

জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে কোটা বিরোধী আন্দোলনে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা— এমন একটি ফোন কলের অডিওর সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি আই। ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি যাচাই করে বিবিসি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, তারা গুলি করবে’।

বিবিসির এক অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার (০৯ জুলাই) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন। রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তারা জানিয়েছে।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি। তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ‘রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।’

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ই জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন। চলতি বছরের মার্চে এটি ফাঁস হয়। এ অডিওর সঙ্গে ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি কেডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, “এই রেকর্ডিংগুলো তার (হাসিনার) ভূমিকা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো পরিষ্কার, যথাযথভাবে যাচাই করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন—এই আদালতেই হাসিনা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলছে।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি, বিক্ষোভকারীদের হত্যাকাণ্ডে সাবেক সরকার ও পুলিশের কর্মকর্তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে। আইসিটি মোট ২০৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন বর্তমানে গ্রেপ্তার রয়েছেন।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের