বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যের প্রাণপুরুষ হিসেবে প্রবাদপ্রতিম তিনি। একাত্তরের মহান মুক্তিসংগ্রামে ‘কাব্যের গৌরব’ হিসেবে তাঁর কলম দিয়েই রচিত হয়েছে স্বাধীনতা তুমি ও তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, বন্দী শিবির থেকে-নামক অমর কবিতাগুলো। বাংলা ভাষা, স্বাধীনতা, মণনশীলতা আর মুক্তবুদ্ধির এই অগ্রদূত নাগরিক কবি শামসুর রাহমান।
দেশ, মা-মাটি আর মানুষ ছাড়াও নাগরিক জীবন, ভাষা সংগ্রাম, গণ আন্দোলন সেই সাথে ভালবাসার চিত্রকল্প সবই উঠে এসেছে বরেণ্য এই কবির কবিতায়। ছেলেবেলা থেকেই কবিতার সঙ্গে গভীর আত্মীয়তা ঘটেছিল তাঁর।
১৯৬০ সালে শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হওয়ার পরে প্রতিভার বিচ্ছুরনে আলোকিত করতে থাকেন বাংলা কাব্যাঙ্গণ। এছাড়া, রৌদ্র করোটিতে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে, অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই সহ ৬৬ টি কাব্যগ্রন্থই তার স্বদেশ চিন্তা,বিপ্লব ও দ্রোহের প্রেমময় প্রামাণ্য দলিল।
অসাধারণ কয়েকটি ছড়াগ্রন্থ, ৪ টি উপন্যাস, প্রবন্ধ আর অনুবাদেরও বই রয়েছে অনন্য প্রতিভাবান কবি শামসুর রাহমানের। জীবিকার সংস্থানকল্পে সাংবাদিকতাকে বেছে নেয়া অমর এই কবি স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে পৃথিবীর আলোয় আসেন বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম এই কবি। আর ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট কবিতার মতোই অন্যলোকে হারিয়ে যান তিনি। ‘উদ্ভট উটের পিঠে স্বদেশ’ যদি চলতে থাকে, তখন পথপ্রদর্শকের মতো শামসুর রাহমানের কবিতা ‘ভস্মস্তুপে রোজ গোলাপের হাসি’ হাসবে এবং সৌরভ ছড়াতে থাকবে অবিরাম।