
গণসংহতি আন্দোলনের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার (৪ জুলাই) বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মেলন। ২০২৪ সালের এই দিনে সংঘটিত ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত এ সম্মেলনে বক্তারা বিচার, মর্যাদা ও সংস্কারের জোর দাবি জানান।
সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং আহত যোদ্ধারা আবেগঘন স্মৃতিচারণা ও রাষ্ট্রীয় অবহেলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা বলেন, “আমাদের এক বছর কেউ মনে রাখেনি। আজ এক বছর পর মনে পড়ল? এখনও আমরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাইনি, বিচার তো দূরের কথা।”
আহত যোদ্ধা নাহিদ হাসান বলেন, “আমি যে বেঁচে আছি, সেটাই একটা বোনাস। যদি শহীদ হতাম, তাহলে হয়তো নাম-নিশানাই থাকত না।”
শহীদ সানির মা রহিমা বেগম বলেন, “আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে কেউ আর হাসিনার মতো হতে পারবে না। শহীদ বা আহতদের পরিবারকে ‘চৌদ্দগোষ্ঠীর চাকরি’ দিয়ে মুল্য দেওয়ার সংস্কৃতি আমরা চাই না। আমাদের এই দেশ ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”
শহীদ মীর মুগ্ধর বাবা মীর মুস্তাফিজ বলেন, “জাতির স্বার্থে সবাইকে এক থাকতে হবে। মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের একমত হতে হবে। নির্বাচনের আগেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আগামী নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু হলে ভালো হবে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ বলেন, “শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিচার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আহতদের এখনো সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
শহীদ মনির হোসেনের স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, “এক বছর হয়ে গেল, আমি এখনো আমার স্বামীর মরদেহ পাইনি।”
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার বলেন, “২৬ জন শ্রমিক এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। শ্রমজীবী মানুষেরা বারবার উপেক্ষিত হয়েছেন, আমরা নতুন বাংলাদেশে সেই অবহেলা দেখতে চাই না।”
দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল আলম বলেন, “যারা এখন সরকারের অংশ, তারা কেউ বুক পেতে গুলি খাননি। যারা বুক পেতেছে, তাদের সম্মান না দিলে তারা ইতিহাসে বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন।”
সম্মেলনের সভাপতি ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “২০২৪ সালে দেশের মানুষ মরণপণ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। আমরা শহীদ ও আহতদের কাছে ঋণী। এই ঋণ আমাদের রাজনীতিতে প্রতিফলিত হবে। ৫ আগস্টের আগেই আমরা জানতে চাই—কেন এখনো শহীদদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়নি? তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, চিকিৎসা ও জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কবে প্রকাশ পাবে?”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের মধ্যেই আমরা বিচার ও সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। অভ্যুত্থানের সরকারের দায়িত্ব জনগণের সংকট নিরসনে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া। আগামী নির্বাচন সংস্কার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হতে হবে। জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিন এগিয়ে নিতে হবে।”
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদ জুলফিকার শাকিলের মা আয়েশা বিবি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শিক্ষক হাসান আশরাফ, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বাবা মাহবুবুর রহমান, নির্মাতা আকরাম খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা উমামা ফাতেমা, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আইনজীবী হুমায়রা নূর, শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন, শহীদ মইনুলের স্ত্রী মায়মুনা ইসলাম, শহীদ রমিজ উদ্দিনের বাবা এ কে এম রকিবুল ইসলাম, জুলাই যোদ্ধা আল আমিন, মাওলানা শফিকুর রহমানসহ শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম