
গাজীপুরের শ্রীপুরে ১১ বছর বয়সি এক শিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর বাবা গতকাল শনিবার চারজনকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে রোববার (১০ আগস্ট) মামলা রুজু হয়।
অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার মোড়লপাড়া গ্রামের শামসুল হুদার ছেলে শফিকুল ইসলাম হায়দার, মৃত সামসুদ্দিন মোড়লের ছেলে জসীম উদ্দীন (৩০), মো. রুবেল মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া (২৫) ও ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাব্বির আহমেদ (২০)। এদের মধ্যে বাবুল মিয়া ভোক্তভোগীর আপন চাচাতো ভাই ও শফিকুল ইসলাম হায়দার তার সম্পর্কে চাচা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। প্রায় ১৫ দিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে একটি দোকানে আশ্রয় নেয় সে। সেখানে অভিযুক্তরা কোমল পানীয়ের সাথে চেতনা নাশক খাওয়ায়। এতে শিশুটি অজ্ঞান হলে অভিযুক্তরা পাশের জঙ্গলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং পুরো ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করে। পরবর্তীতে এই ভিডিও ব্যবহার করে শিশুটিকে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে একাধিকবার গণধর্ষণ করে। শিশুটি প্রথমে ভয়ে পরিবারের কাউকে কিছু জানায়নি। পরে অভিযুক্তরা ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সম্প্রতি ভুক্তভোগীর ভাইয়ের নজরে আসে। পরে পুরো ঘটনা পরিবারকে খুলে বলে শিশুটি।
ভুক্তভোগী শিশু হওয়ায় ইত্তেফাক তার কাছে থেকে বক্তব্য নেয়নি। শিশুটি তার বাবা-মার কাছে ঘটনার বর্ণনা করে। সে অনুযায়ী শিশুটির পিতামাতা ইত্তেফাককে বলেন, ‘তারা সেভেনআপ খাওয়ানোর পর থেকেই তার (শিশুটির) আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর জঙ্গলে উলঙ্গ অবস্থায় নিজেকে দেখতে পায়। সে সময় একজনকে ভিডিও করতে দেখে সে। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করে, কি করছো, কেন করছো জানতে চাইলে সে বলেছিল, 'তুই যদি এরপর আমাদের কাছে না আসিস, তাই ভিডিও করছি। তুই যদি সুযোগ নেস, তাহলে তোর বাবা-মাকে এই ভিডিও দেখাবো, তখন লজ্জায়-ঘৃনায় তোর বাবা-মা মারা যাবে। এ সময় আমাদের মেয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার আকুতি করলেও তারা কেউ শুনেনি।
এর কয়েকদিন পর আমাকে ভিডিও প্রকাশ ও বাবা-মাকে দেখানোর ভয় দেখিয়ে মেয়েটির চাচাত ভাই বাবুল সেই একই জায়গায় আমাদের মেয়েকে একাধিকবার নিয়ে গিয়েছে। এরপর তারা চারজন মিলে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। আমাদের মেয়ে কান্নাকাটি করে বলেছে, আমি তো তোমার চাচাত বোন, তবুও আমাদের মেয়েকে ছাড়েনি তারা। বারবার ভিডিও ডিলিট করার কথা বললে সে বলে, 'তুই তো আসবি না, তাই তো ভিডিও করে রেখেছি।'
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা বলেন, 'এই ঘটনার পর মেয়েটা বারবার বলছে, মনে হচ্ছে এখন আমি মরেই যাই। তারা আবার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে, সামাজিকভাবেও আমরা হেয় হচ্ছি। আমরা এই অন্যায়ের বড় ধরনের বিচার চাই, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
ভুক্তভোগীর ভাই বলেন, 'আমরা নিম্নবিত্ত পরিবার বলে এত নিকৃষ্ট ঘটনার পরও এলাকার কারোরই সহযোগিতা পাচ্ছি না। উল্টো ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা আমাদের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি আমার বোনের সাথে খারাপ করার সঠিক বিচার চাই। এমন নৃশংস ঘটনা যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে না ঘটে।'
অভিযোগের বিষয়ে রোববার শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক ইত্তেফাককে জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম