‘আমার বাচ্চাদের বাবাকে ফেরত দেন’—কালামের স্ত্রীর আহাজারি

সোমবার,

২৭ অক্টোবর ২০২৫,

১২ কার্তিক ১৪৩২

সোমবার,

২৭ অক্টোবর ২০২৫,

১২ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

‘আমার বাচ্চাদের বাবাকে ফেরত দেন’—কালামের স্ত্রীর আহাজারি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

Google News
‘আমার বাচ্চাদের বাবাকে ফেরত দেন’—কালামের স্ত্রীর আহাজারি

“আমার সন্তানরা এখনো বুঝতে পারেনি তাদের বাবা আর ফিরবে না। ওরা বলে, ‘বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না।’ আমি কীভাবে ওদের বোঝাই যে, ওদের বাবা আর কখনো জাগবে না! আবুল কালামই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। এখন আমি আর আমার সন্তানরা দিশেহারা।” কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে প্রাণ হারানো আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া।

আজ সোমবার সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে স্বামীর দাফনের পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। তার আহাজারিতে কেঁদে ওঠে আশপাশের সবাই।

সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় এই তরুণ ব্যবসায়ীর। এর আগে সকাল নয়টার দিকে উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বজন, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গ্রামবাসী। প্রিয়জনের বিদায়ে শোকের আবহ নেমে আসে পুরো এলাকায়। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ আবার নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন কফিনের দিকে।

এর আগে রোববার রাত ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন আইলপাড়া এলাকার বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেন সহকর্মী, প্রতিবেশী ও স্থানীয় শত শত মানুষ।

নিহত আবুল কালাম আজাদ ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন। জীবিকার তাগিদে তিনি বিমানের টিকিট বিক্রির কাজ করতেন। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন আবুল কালাম।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে মেট্রোরেলের একটি ভারী বিয়ারিং প্যাড ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পথচারী আবুল কালাম। আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন আশপাশের লোকজন।

নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া বলেন, “রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় ফোন আসছে—বাচ্চাদের বাবা নাকি এক্সিডেন্ট করছে, হাসপাতালে ভর্তি। তখন কিন্তু আমার কলিজা নাই এই পৃথিবীতে। বাচ্চারা তো বাবারে খুঁজতাছে, এখনো বাচ্চারা বুঁঝে না বাবা কী, বাবা হারানোর বেদনা কী। কিছুক্ষণ পরেই তারা খুঁজব, ‘ডেডি আসে নাই, ডেডি কোথায়, ডেডি আমার জন্য চকলেট, কোক নিয়ে আসো। কারে বলবে, ‘আমার জন্য রুটি, সস নিয়ে আসো ডেডি, ও আমার আল্লাহ।”

তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ হতে পারি, কিন্তু ছেলে মেয়েদের কষ্ট দেয়নি। আমার কলিজাগো আমার বাচ্চাদের বাবাকে ফেরত দেন, যেন সারাজীবন তারা দেখতে পারে। এই অল্প বয়সে শেষ হয়ে গেছে। ওরা কার কাছে যাবে, কার কাছে থাকবে। আমাদের অভিভাবক তো ছিলেন তিনি। ওদের ভবিষ্যত কি হবে, ওরা কি ভাবে চলবে, কি ভাবে থাকবে। কে করবে ওদের দেখাশুনা। আমরা তো এতিম হয়ে গেলাম রে।’

সরকারের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে কী চাইবো! সরকার তো কিছুই করে না, কত দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের কাছে আর কী চাইবো! আমার কলিজাগো বাবাকে তো আর ফেরত দিতে পারবে না, আমার স্বামীকে তো আর ফেরত দিতে পারবে না। আমার কিছুই চাওয়ার নাই, আমার কলিজা চলে গেছে সারাজীবনের লইগ্যারে।’

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস বলেন, আবুল কালামের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছি। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারের পাশে রয়েছি। পরিবারটি যে কোনো প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা পাবে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের