বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪,

১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃহস্পতিবার,

২৮ মার্চ ২০২৪,

১৪ চৈত্র ১৪৩০

Radio Today News

দিলীপ কুমারের অটোগ্রাফ পেতে সময় লেগেছে ৪৬ বছর: অমিতাভ

রেডিওটুডে নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৭ জুলাই ২০২১

আপডেট: ০৭:৫৫, ১৩ জুলাই ২০২১

Google News
দিলীপ কুমারের অটোগ্রাফ পেতে সময় লেগেছে ৪৬ বছর: অমিতাভ

ভারতের কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমার

হিন্দি চলচ্চিত্রের এক যুগনায়ক দিলীপ কুমার। ছয় দশকের রাজত্বে অর্ধশতাধিক ছবির অভিনেতা। কিংবদন্তি তারকা দিলীপ কুমারের আসল নাম মহম্মদ ইউসুফ খান। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত, বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত পেশোয়ারে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর। বাবা লালা গোলাম সারওয়ার, মা আয়েশা বেগম। বাবা ছিলেন ফল ব্যবসায়ী। ১৯৩০ সালে পরিবার নিয়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন তাঁরা। কর্মজীবনের শুরুতে দিলীপ কুমার ছিলেন ক্যান্টিন মালিক, পাশাপাশি শুকনো ফল সরবরাহকারী। ১৯৪৪ সালেজোয়ার ভাটাছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ। ১৯৪৭ ১৯৪৮ সালে যথাক্রমেজুগনুশহিদসিনেমা বাণিজ্যসফল হওয়ার পর আর পিছন ফিরে তাকাননি। ১৯৭৬ পর্যন্ত চুটিয়ে অভিনয় করেন। কয়েক বছর বিরতির পর আবার পুরোদমে। ১৯৯৮ সালে তাঁর শেষ ছবিকিলা

দিলীপ কুমার অভিনীত অর্ধশতাধিক ছবির কয়েকটি— 'শবনম', 'আন্দাজ', 'বাবুল', 'দিদার', 'অমর', 'দেবদাস', 'মধুমতি', 'মুঘল--আজম', 'গঙ্গা যমুনা', 'রাম অর শ্যাম'

দিলীপ কুমারের আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ দ্য সাবস্ট্যান্স অ্যান্ড দ্য শ্যাডো (অনুলেখক উদয় তারা নায়ার) এক আশ্চর্য জীবনের আলেখ্য।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন যেমন জয় করেছেন, তেমনই পুরস্কার পেয়েছেন অগণিত। হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অভিনেতাফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কারপেয়েছেন আট বার। ১৯৯৩ সালে সম্মানিত হয়েছেনফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা’-য়। ১৯৯৪ সালে পেয়েছেনদাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ভারত সরকার তাঁকে ১৯৯১ সালেপদ্মভূষণএবং ২০১৫ সালেপদ্মবিভূষণসম্মানে সম্মানিত করে।

অভিনয় জীবনে ট্রাজেডির রাজা হলেও দিলীপ কুমারের ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু ভালবাসার রঙে রঙিন।খ্যাতির শিখরে থাকা এই অভিনেতার সঙ্গে ঘন ঘনই তৎকালীন সুন্দরী নায়িকাদের নাম জড়িয়েছে। কামিনী কৌশল, মধুবালা, বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও দিলীপ কুমারের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক হয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী সায়রা বানুর। ১৯৬৬ সালে তাঁদের যখন বিয়ে হয়, দিলীপ কুমার ৪৪, সায়রা বানু ২২ বছরের। জীবনের নানা ভাঙাগড়ায় এই সম্পর্ক ছিল অটুট। দীর্ঘজীবী দিলীপ কুমারকে শেষ বয়সে ভালবাসা যত্নে আগলে রেখেছেন সায়রা বানু। এক সময় আসমা- সঙ্গে দিলীপ কুমারের দ্বিতীয় বিবাহ হলেও সে বিবাহ দ্রুত বিচ্ছেদে পরিণত হয়। অদ্ভুত ভালবাসার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে সায়রা বানুই তাঁর সঙ্গে থেকে যান শেষ পর্যন্ত।

কেমন ছিল এই মহাতারকার আকর্ষণ? আম-আদমির কথা থাক। পরের প্রজন্মের মহাতারকা অমিতাভ বচ্চন একটি স্মৃতিচারণায় জানান, দিলীপ কুমারের অটোগ্রাফ পেতে তাঁর ৪৬ বছর লেগেছে। প্রথম বার মা-বাবার সঙ্গে গিয়েছিলেন দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি হোটেলে, যেখানে দিলীপ কুমার সবান্ধবে উপস্থিত। নায়ককে ঘিরে ভিড়ের কারণে তিনি সফল হননি সে দিন। কিছুকাল পরে আরেকটি সুযোগ আসে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু একটা পার্টি দিয়েছিলেন। দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, রাজ কাপুর হাজির। কিন্তু সেই পার্টিতেও অমিতাভ প্রিয় তারকার অটোগ্রাফ নিতে পারেননি। এমনকী ১৯৮২ সালেশক্তিছবিতে দিলীপ কুমারের সঙ্গে কাজ করলেও অমিতাভ তাঁর অটোগ্রাফ সংগ্রহে ব্যর্থ হন। অবশেষে তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয় ২০০৫ সালে। রানি মুখার্জির সঙ্গেব্ল্যাকসিনেমায় ছিলেন অমিতাভ। রানির আমন্ত্রণে স্ত্রী সায়রা বানুকে নিয়ে ছবি দেখতে এসেছিলেন দিলীপ কুমার। ছবি দেখে আপ্লুত দিলীপ কুমার অমিতাভকে একটা দীর্ঘ চিঠি লেখেন। তাতে অনেক প্রশংসাবাক্য থাকলেও চিঠির শেষে দিলীপ কুমারের সই দেখেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান অমিতাভ বচ্চন। দিলীপ কুমার ছিলেন নায়কদের নায়ক।

শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলীপ কুমারের শরীর নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও ভক্তরা তাঁর মনের সজীবতায় মুগ্ধ ছিলেন। মাঝে মাঝেই স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে তাঁর রঙিন ছবি সকলকে মুগ্ধ করেছে। করোনার উপদ্রব শুরু হলে নিজে নিভৃতবাসে থেকেছেন এবং সকলকে সতর্ক করেছেন। তাঁর অসংখ্য গুণগ্রাহীদের মধ্যে বিশেষ একজন হলেন বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান শাহরুখের সঙ্গে দিলীপ কুমার এবং সায়রা বানুর সুন্দর সম্পর্কের কথা সকলেই জানেন। শাহরুখ তাঁর স্মৃতিচারণায় জানিয়েছেন, “ছোটবেলা থেকেই আমি দিলীপ সাবকে জানতাম। কারণ, বাবা তাঁকে চিনতেন। পরে কেতন মেহতার সঙ্গে কাজের সময় তাঁর অফিসে আমি দিলীপ কুমারের ছবি দেখে অবাক হয়ে যাই। আরে! তো আমি! আমার মতনই লাগছে। সত্যিই দিলীপ সাব আর সায়রাজি আমাকে তাঁদের ছেলের মতন ভালবেসেছেন।' অভিনেতা দিলীপ কুমার সম্পর্কে শাহরুখ বলেন, "দিলীপ সাবের নিজের আলো আছেসেই আলোতেই আমরা মজে আছি এত কালপথও চলছি।"

যুগের অবসান হয় প্রকৃতির নিয়মেই। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ী আলো পৌঁছে যায় আগামীতে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

 

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের