প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ঢাকার খুচরা তামাক বিক্রেতাদের গভীর উদ্বেগ

বুধবার,

২৪ ডিসেম্বর ২০২৫,

১০ পৌষ ১৪৩২

বুধবার,

২৪ ডিসেম্বর ২০২৫,

১০ পৌষ ১৪৩২

Radio Today News

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ঢাকার খুচরা তামাক বিক্রেতাদের গভীর উদ্বেগ

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ঢাকার খুচরা তামাক বিক্রেতাদের গভীর উদ্বেগ

প্রস্তাবিত “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ”-এর কিছু ধারা নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার তামাকজাত পণ্যের খুচরা বিক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, খসড়ার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নগরভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসা, আত্মকর্মসংস্থান এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকার খুচরা বিক্রেতারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে তাদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক, যাতে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা, ব্যবসায়িক কাঠামো এবং প্রান্তিক বিক্রেতাদের জীবন-জীবিকা সরাসরি তুলে ধরা যায়। উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে উচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো প্রান্তিক বিক্রেতাদের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।

এ সম্পর্কিত একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকার খুচরা বিক্রেতা জামাল উদ্দিন, বাবুল মিয়া, আ. রাজ্জাক, কবির হোসেন, মো. সাকিব হাসান, কুলছুম এবং মো. শরীফ হোসেন।

বিবৃতিতে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, তামাক শিল্প বাংলাদেশের খুচরা ব্যবসায়ীদের জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। দেশে প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষ সিগারেট বিক্রির ওপর নির্ভরশীল এবং খুচরা বিক্রেতাদের মোট বিক্রয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ আসে তামাকজাত পণ্য থেকে। শুধু সিগারেট বিক্রিই প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সরাসরি সমর্থন করে। তাই সিগারেটের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য পৃথক রিটেইল লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবকে তারা অবাস্তব ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন।

দোকানিরা সাধারণত স্থানীয় সরকার প্রদত্ত ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসা চালান। পৃথক রিটেইল লাইসেন্স চালু হলে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রান্তিক বিক্রেতা, যাদের অনেকের হোল্ডিং নম্বর নেই, তা মানতে পারবেন না। এতে ব্যবসায়িক খরচ, হয়রানি এবং দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে। অতি ক্ষুদ্র ও ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব নিয়েও বিক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের নিম্ন আয়ের ভোক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য খুচরা আকারে কিনেন। খুচরা বিক্রি বন্ধ হলে বিক্রেতা ও ভোক্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে এবং মাঠপর্যায়ে বিধান কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব হবে। এতে বৈধ বিক্রয় ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে অবৈধ বাজার বিস্তৃত হতে পারে।

ভ্রাম্যমাণ বা ফেরি দোকান নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও বিপুলসংখ্যক বিক্রেতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী দোকানের মাধ্যমে তামাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া দোকান বন্ধ হলে তারা হঠাৎ আয়ের উৎস হারাবেন, যা বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করতে পারে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে হয়রানি ও আইনের অপপ্রয়োগের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।

বিক্রেতারা জোর দিয়ে বলছেন, তারা আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনায় বিশ্বাসী এবং জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব স্বীকার করেন। তবে আইন প্রণয়নের সময় দেশের বাস্তবতা, নগরভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসার কাঠামো এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। তারা আশা করছেন, অংশীজনদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবভিত্তিক, ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হলে তা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা রক্ষায় সহায়ক হবে।

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের