
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) চলমান অস্থিরতার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার সকালে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল খালি করার জন্য ৯টার সময়সীমা বেঁধে দেয়। এরপরই অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন এবং কর্তৃপক্ষকে ৪টি দাবি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে কেআর মার্কেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করবেন।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হোসাইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল থেকে একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল বের করেন। তারা গতকাল রাতের হামলার বিচার চেয়ে এবং হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই সময়ে অন্য হল থেকেও শিক্ষার্থীরা কেআর মার্কেটের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে শুরু করেন।
সকালে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে অবস্থান করছেন। বেগম রোকেয়া ও জুলাই ৩৬ ছাত্রী হলের কিছু নারী শিক্ষার্থী এরই মধ্যে ব্যাগ ও বইপত্র নিয়ে হল ত্যাগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোকেয়া হলের এক নারী শিক্ষার্থী সকাল ৯টায় জানান, গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা ছিল ন্যাক্কারজনক। পরিবার থেকে চাপের কারণে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় তারা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে, ঈশা খাঁ হলের কয়েকজন ছাত্র জানান, তারা হল ছাড়বেন না। তাদের মতে, রাতের বেলা নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়াটা এক ধরনের স্বৈরাচারী আচরণের পুনরাবৃত্তি। তারা অভিযোগ করেন, কিছু শিক্ষক এই হামলার সঙ্গে জড়িত। এ কারণেই এই ধরনের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুনির হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল বহিরাগতরা হামলা চালানোয় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। বহিরাগতদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনও ইন্ধন ছিল না। যারা হামলা চালিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা স্বার্থে জরুরি সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত মানা না মানার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে ৪টি দাবি উত্থাপন করেন।
তাদের দাবিগুলো হলো-
শুধু কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় সম্পূর্ণ প্রক্টোরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে, ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও হামলার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, এই হামলায় জড়িত শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম