শনিবার,

৩০ আগস্ট ২০২৫,

১৫ ভাদ্র ১৪৩২

শনিবার,

৩০ আগস্ট ২০২৫,

১৫ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

টেকনাফের জলসীমায় হঠাৎ বেপরোয়া আরাকান আর্মি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ৩০ আগস্ট ২০২৫

Google News
টেকনাফের জলসীমায় হঠাৎ বেপরোয়া আরাকান আর্মি

টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদের জলসীমায় হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি। গত চার দিনে নাফ নদের জলসীমা থেকে ৭টি বাংলাদেশি ট্রলারসহ ৪৯ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে তারা। এ নিয়ে টেকনাফ উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আরাকান আর্মি খাবারসহ প্রয়োজনীয় পণ্য ও মুক্তিপণ হিসেবে টাকা আয়ের জন্যই এমন তৎপরতা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে পদক্ষেপ ও নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে ট্রলার মালিক সমিতি। 

শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট বোট মালিক সমিতি জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট একটি নৌকাসহ দুজন, ১২ আগস্ট একটি ট্রলারসহ ৫ জেলে, ২৩ আগস্ট একটি ট্রলারসহ ১২ জন, ২৪ আগস্ট দুটি ট্রলারসহ ১৪ জন, ২৫ আগস্ট একটি ট্রলারসহ সাতজন ও ২৬ আগস্ট দুটি ট্রলারসহ ১১ জন, ২৮ আগস্ট একটি ট্রলারসহ পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এ নিয়ে গেল ২২ দিনে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে ৫৬ জন জেলেকে। যাদের কোনো খবর পাচ্ছে না পরিবারগুলো। এখন পর্যন্ত কোনো জেলেদের ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিনের কাছে ‘সীতা’ পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি সদস্যরা ট্রলারসহ আরও পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে ট্রলার মালিক সমিতি।


মঙ্গলবার দুপুরে ট্রলারসহ এই পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানান টেকনাফ কাযুকখালীয়া ঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ। তিনি জানান, টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন পল্লানপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন একটি ট্রলারসহ পাঁচ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি ও তিনজন রোহিঙ্গা। 

বিজিবি বলছে, অসচেতনতা এবং কিছু চোরাকারবারির সহায়তায় জলসীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ায় নাফ নদ ও সাগর মোহনা থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ জলসীমায় ঢুকে লোকজন ধরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ শুধু আরাকান আর্মি কেন, মিয়ানমারের কোনো গোষ্ঠীর নেই। কারণ সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তায় বিজিবির তৎপরতা রয়েছে। নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। 

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, আরাকান আর্মি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ওই অঞ্চল গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাখাইনে দেশের অন্য কোনো অঞ্চল থেকে কোনো প্রকার খাবার, পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে রাখাইনে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ থেকে পণ্য সংগ্রহের জন্য অর্থের প্রয়োজন আরাকান আর্মির। তাই নাফ নদে জেলে অপহরণ ও ট্রলার লুট বা চাঁদাবাজিকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। এটি বন্ধের জন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আরও সতর্ক এবং কৌশলগত অবস্থান জরুরি।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে এ বিষয়ে কথা বলেন বিজিবির রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নাফ নদের মোহনাসংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে কোনো কোনো সময় মিয়ানমারের জলসীমার ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হয়। এছাড়া জেলেরা অনেক সময় ভুলবশত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন। এতে আরাকান আর্মির হাতে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।’

অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে আরাকান আর্মির সঙ্গে আন-অফিসিয়ালি যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, ‘আরাকান আর্মি সীমান্তে নন-ফ্যাক্টর গোষ্ঠী হলেও তাদের সঙ্গে বিজিবির আন-অফিসিয়াল যোগাযোগ রয়েছে। জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। আমরা চাপ প্রয়োগ করছি, যেন আর কোনো জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া না হয়।’ সাগরে মাছ ধরতে গেলে অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত সীমানা মেনে চলতে জেলেদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে সীমান্তে আসা কিছু রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিজিবির কমান্ডার বলেন, ‘আহত ও অসহায় কিছু রোহিঙ্গার অবস্থা দেখে মানবিকতার খাতিরে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। তবে সীমান্ত সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছি। মাদক ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারি চলছে।’ 

টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আরাকান আর্মি সাগর থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলেদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।

মিয়ানমারে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ১৯ ট্রলারসহ ১২২ মাঝিমাল্লাকে আটক 
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন নাফ নদে মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১২২ জন মাঝিমাল্লাকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। আটকৃতদের মধ্যে ৯৩ জন রোহিঙ্গা। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ মোহনাসংলগ্ন নাফ নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। 
তবে আটক জেলেদের ভাষ্য, তারা কোনোভাবেই জলসীমান্ত অতিক্রম করেননি। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে কোস্টগার্ড তাদের ধরে নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাহউদ্দিন রশীদ তানভীর বলেন, ‘বাংলাদেশি জেলেদের আরাকান আর্মি কর্তৃক প্রতিনিয়ত ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ মোহনাসংলগ্ন নাফ নদের বিভিন্ন এলাকায় কোস্টগার্ড নজরদারি জোরদার করে। এ সময় নাফ নদের জলসীমার শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি ১৯টি ট্রলারসহ ১২২ জেলেকে আটক করে 
ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।’ 

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের