
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নুরের মাথায় অনেক জোরে আঘাত করা হয়েছে, তাই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে হামলার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদ। হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি।
শুক্রবার রাতে বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে লাঠিপেটা করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য। এ সময় নুরের মাথা ও নাক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে চিকিৎসকদের বোর্ড। শনিবার সকালে তার জ্ঞান ফিরলেও শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. জাহিদ রায়হান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রায়হান বলেন, নুরের মাথায় অনেক জোরে আঘাত করা হয়েছে, তাই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সোডিয়াম লেভেলের থেকে কম আছে নুরের শরীরে। এই লেভেল না বাড়লে আরও ঝুঁকিতে পড়বেন তিনি। তখন আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘রাতে তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়৷ সকালেও মাথার সিটিস্ক্যান করানো হয়েছে৷ তাতে দেখা গেছে তার মাথার হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া নাকের হাড় ও ডান চুয়ালের হাড়ও ভেঙে গেছে। মাথার ভেতর রক্তক্ষরণ হলেও তা অতিসামান্য। তার চোখ, মুখ ফোলা রয়েছে। চোখেও রক্তজমে আছে। তবে শরীরে কোথাও আঘাত দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সকালে নিউরোসার্জারি বিভাগ, নাক-কান-গলা বিভাগ, ক্যাজুয়েলেটি বিভাগের চিকিৎসকরাসহ মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসারা তাকে পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে তার কোনো অস্ত্রোপচার লাগবে না বলে মনে করছে বোর্ড। এখনও তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য সভায় বসার কথা রয়েছে।
সকালে ঢাকা মেডিকেলে নুরকে দেখতে গিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নুরকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
রাশেদ খান বলেন, দায় থাকুক আর না থাকুক, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সুতরাং গতকালের (শুক্রবার) ঘটনার পর আপনি আর এই পদে কোনোভাবেই থাকতে পারেন না।
তিনি বলেন, আপনার পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমরা আপনার পদত্যাগ দাবি করছি। লজ্জা থাকলে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করবেন।
এদিকে দুপুরে নূরকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন স্বৈরাচারী হাসিনা পতনের আন্দোলনে অন্যতম নেতা নূর। তার ওপর নির্মম হামলা মানুষ মেনে নেবে না।
মঈন খান বলেন, নুরের ওপর যে ঘটনা হয়েছে, যে অত্যাচার হয়েছে, যে জুলুম হয়েছে, সেটির যেন এ দেশে আর কোনো দিন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। গায়ের জোরে তার মুখ বন্ধ করা যাবে না।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক সক্রিয় ছিলেন উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, কেন তাঁকে এই পরিণতিতে আসতে হয়েছে, সেটি ভেবে দেখতে হবে। নুরুল হককে এ নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হবে, এটি বাংলাদেশের কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই হামলার ব্যাখ্যা দাবি করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি। আর নূরের ওপর হামলার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে গণঅধিকার পরিষদ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম