
র্যাগিংয়ের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবির) বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জাবি প্রশাসন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, রোববার ছেলেদের ২১ নম্বর হলে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী একই বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করেন। উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের নির্দেশক্রমে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮’-এর ধারা ৪-এর (১) (খ) অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামানকে। সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. আল-আমিন খান সদস্য এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি) লুৎফর রহমান আরিফ সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সাময়িক বহিষ্কৃত ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হলেন- মো. তানভীর রহমান মুন, মো. আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আব্দুল্লাহ আল সাঈদ, মো. আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, এস. এম. মাহামুদুন্নবী, মো. আবু সাইদ, জান্নাতুল আদন, আহম্মেদ আরেফিন রাতুল, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, মো. মাহামুদুল হাসান ফুয়াদ, মো. আল হাসিব, মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. রাকিবুল হাসান নিবির, মো. জাহিদুল ইসলাম ও উশান্ত ত্রিপুরা।
জানা যায়, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর হলের (সাবেক শেখ রাসেল হল) ৪০৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, নবীনদের প্রথমে রফিক-জব্বার হলচত্বরে ডাকা হয়। পরে তাদের ২১ নম্বর হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে নিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে প্রায় ২০ মিনিট অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ সময় ‘হলের নিয়ম-কানুন’ ও ‘শৃঙ্খলা মেনে চলা’ বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের বিষয়ে ২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা হল সংসদের প্রতিনিধি, কিছু শিক্ষার্থী ও হলের কয়েকজন স্টাফসহ তাদের হাতেনাতে ধরেছি। এটা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি একটি কাজ। বিস্তারিত যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করব।
র্যাগিংয়ের ঘটনা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম ও ২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিনকে অবহিত করে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন হলটির ৪০৩ নম্বর কক্ষে যায়। এ সময় ২১ নং হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী, আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবরার শাহরিয়ার এবং হলের ২ জন কর্মচারী সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
তাদের ভাষ্যমতে, অভিযানের শুরুতে কক্ষটির বাইরে ৫৩তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে পাহারারত অবস্থায় দেখা যায়। তিনি ভেতরে থাকা অভিযুক্তদের মুঠোফোনে খবর দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে কক্ষটির ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় দরজা-জানালা বন্ধ করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫৪ ব্যাচ) প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে একই বিভাগের ৫৩ ব্যাচের প্রায় ১৬ জন র্যাগিং দিচ্ছিল। এ সময় ৫৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের সকলের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে একপাশে টেবিলের ওপর বন্ধ করে রাখা হয়। প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
তবে কক্ষটিতে উপস্থিত ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায়, নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আলোচনার জন্য জুনিয়রদের ডাকা হয়েছে। পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় শব্দ এড়াতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে তারা দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন তানভীর বলেন, ‘পরীক্ষার কারণে আমরা নবীনবরণ অনুষ্ঠান করতে পারিনি। তাই আলোচনার জন্য জুনিয়রদের ডেকেছিলাম। র্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম