হংকং অগ্নিকাণ্ড: শোকের মাঝে মানবিকতার আলো

বুধবার,

১০ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বুধবার,

১০ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

হংকং অগ্নিকাণ্ড: শোকের মাঝে মানবিকতার আলো

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
হংকং অগ্নিকাণ্ড: শোকের মাঝে মানবিকতার আলো

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের তাই পো এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রায় দুই সপ্তাহ পর যখন স্মৃতিসৌধটি সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল, তখনও মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছিল নিভে যাওয়া সাতটি ভবনের ধ্বংসস্তূস্তুপের সামনে। ফুলে শোভিত পথ, কাগজের সারস, হাতে লেখা বার্তা সব মিলিয়ে যেন এক নীরব শহর নিজের ক্ষত স্পর্শ করে, আর ধীরে ধীরে সেরে ওঠার চেষ্টা করছে।  

২৬ নভেম্বরের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যখন আগুন সাতটি ভবন গ্রাস করে, তখন কেউই ভাবতে পারেনি ক্ষতির মাত্রা কত গভীর ভয়াবহ হতে পারে। ৪ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৯ জনে, এখনও নিখোঁজ ৩১ জন। শনাক্ত করা গেছে ১৪০টি মরদেহ। বয়সের ভিন্নতায় এই সংখ্যা আরও বেশি বেদনাদায়ক। এদের নিহতদের মধ্যে ছিল মাত্র এক বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৯৭ বছরের বৃদ্ধ প্রবীণ পর্যন্ত।

অগ্নিকাণ্ডের পর গড়ে ওঠা সাময়িক স্মৃতিসৌধটি খুব দ্রুতই শোকের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।  

ইন্দোনেশিয়ান গৃহকর্মী ইমেলডা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ৩০ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। আমার সহকর্মীও ছিল,। তার ছোট্ট পাঁচ বছরের সন্তানসহ দুজনই মারা গেছে। আমরা এখন তার পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছি, যতটা পারছি সাহায্য করছি। 

এই অগ্নিকাণ্ডে ৭০০-এর বেশি দমকলকর্মী কাজ করেছেন। সাত তলা, আট তলা, বারান্দা, দেয়াল আগুনের দাপটে সবকিছু ভেঙে পড়ছিল। কিন্তু থামেননি সম্মুখসারির সেই যোদ্ধারা। অনেকেই আগুনের বিরুদ্ধে টানা ৪০ ঘণ্টা লড়াই চালিয়েছেন টানা ৪০ ঘণ্টা।

অগ্নিনির্বাপণে প্রাণ হারানো ৩৭ বছর বয়সী দমকলকর্মী হো’-এর প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়ে অসংখ্য মানুষ ফুল রাখেন।

নির্মাণ শিল্পে কাজ করা এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, বুঝি, আগুন অনেক কত দ্রুত ছড়ায়। তবু দমকল, পুলিশ সবাই সময়মতো এসেছেন। তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছেন।

সিভিল এইড সার্ভিস, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক সবাই মিলে নিশ্চিত করেছেন কেউ যেন এই শোকের ভিড়ে হারিয়ে না যায়। ফুল ও কাগজের পাখা নষ্ট না করে পাঠানো হচ্ছে সামাজিক সংগঠনগুলোতে, স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণ করা হবে মানুষের জন্য। 

এক স্বেচ্ছাসেবক ফোফো বললেন, আমরা চাই না শোক মানে নতুন করে ক্ষত খোঁড়া হোক। ফুল যাবে পরিবেশ কর্তৃপক্ষের কাছে, কাগজের স্মারক শেষকৃত্য দপ্তরে, আর বার্তাগুলো পৌঁছাবে কল্যাণ সংস্থায়। সবাই মিলে এই স্থানটিকে শান্ত রাখতে চাই। 

শোকের ভেতর জন্ম নেয় নতুন সম্পর্ক। মানুষ এগিয়ে আসে একে অন্যের পাশে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কমান বলেন, হাজারো মানুষ খাবার রান্না করেছে, অন্য শহর থেকেও এসেছে সহায়তা। দেখেছি,  কার কে কোথায় জন্ম বা কে কী কাজ করেন তা বড় নয়, বিপদে সবাই এক।

যে পার্কটি আচমকা এতদিন হয়ে উঠে উঠেছিল কান্নার আশ্রয়, সেটিই আবার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হবে ফিরবে শিশুদেরর কলরবেহাসিতে, ভোরের সকালপদচারণাবেলার হাঁয়টায়। তবে স্মৃতিসৌধ সরলেও মানুষ জানে এই কয়েক দিনের সহমর্মিতা, হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য, সবার ভাগ করা কষ্ট; কিছুই সবকিছু হারিয়ে যাবে না।ই রয়ে যাবে মনে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের