
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওরাকজাই জেলায় সেনাবাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার জবাবে চালানো অভিযানে অন্তত ৩০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ এই অভিযানের কথা গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর)।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৮ অক্টোবর ওরাকজাই জেলায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িবহরের ওপর হামলার পর ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সেখানে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বড় ধরনের অভিযান চালানো হয়। এতে সেনা-পুলিশ যৌথ বাহিনী ৩০ জন সন্ত্রাসীকে ‘নরকে পাঠিয়েছে’।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদের শিকড় উৎখাতে সেনাবাহিনী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
৮ অক্টোবর বুধবার, ওরাকজাই ও কুররম জেলার সংযোগ সড়কে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িবহরকে লক্ষ্য করে বন্দুক ও বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। এতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনাইদ তারিক এবং মেজর তায়াব রাহাতসহ ১১ সেনা সদস্য নিহত হন।
আইএসপিআর জানায়, ৭ ও ৮ অক্টোবর ওরাকজাইয়ে পরিচালিত অভিযানে ১৯ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। অভিযানের পরদিন সকালে ওই এলাকায় থেকে ফেরার পথে সেনাবাহিনীর গাড়িবহর হামলার শিকার হয়।
টিটিপি আগে থেকেই ওরাকজাই-কুররম সংযোগ সড়কে ওঁত পেতে ছিল। সেনাবাহিনীর বহর সড়কে প্রবেশ করতেই সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরপর সড়কে পুঁতে রাখা একটি বোমা বিস্ফোরিত হলে দু’টি সামরিক যান ধ্বংস হয়। ওই গাড়িগুলোর একটিতে ছিলেন কর্নেল তারিক ও মেজর রাহাত।
আইএসপিআরের বিবৃতি অনুযায়ী, ৯ অক্টোবর ওরাকজাইয়ের পাশাপাশি খাইবার পাখতুনখোয়ার ডেরা ইসমাইল খান জেলাতেও অভিযান চালানো হয়। সেখানে আরও ৮ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি প্রদেশ—খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানপন্থি তালেবান গোষ্ঠী টিটিপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, বেলুচিস্তানে সক্রিয় রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। পাকিস্তান সরকার উভয় গোষ্ঠীকেই নিষিদ্ধ করেছে।
ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত সহিংসতা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
সিআরএসএস-এর তথ্য মতে, এ সময়ে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩২৯টি, যাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৯০১ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৫৯৯ জন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম