চলতি বছরের জুনে ভয়াবহ ১২ দিনের সংঘাতে জড়িয়েছিল ইরান ও ইসরায়েল; যেখানে শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি যুদ্ধমুখে নামে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে। সেই সংঘাতের ক্ষত এখনও শুকায়নি—এরই মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষই। এবার সেটি হতে পারে সর্বাত্মক আকারের, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
সোমবার (১০ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুনের সংঘাতের পরও ইরান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধরে রেখেছে এবং হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির দৌড়ে রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলও মনে করছে—তাদের ‘কাজ এখনো শেষ হয়নি’। তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতি প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় পরবর্তী রাউন্ডের জন্য দ্বিগুণ প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরানের কাছে বর্তমানে ১১টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো ইউরেনিয়াম মজুদ আছে। তেহরান দাবি করেছে, সেগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে নিরাপদে রাখা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ওই উপকরণ গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্প পরিচালক আলি ভায়েজ বলেন, তেহরান এখন এমন অবস্থায় পৌঁছাতে চায়, যাতে একযোগে দুই হাজার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা সম্ভব হয়—যার লক্ষ্য এক আঘাতেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অচল করে দেওয়া।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাওয়ায় ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এর মধ্যেই দেশটি নতুন একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, যেখানে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
গালফ অঞ্চলের কূটনীতিকরা সতর্ক করেছেন, এই পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে হামলা এখন ‘প্রায় অবশ্যম্ভাবী’। অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা চায় বলে দাবি করে, কিন্তু তারা ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করেনি—এ অবস্থায় সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ভেতরেই এখন মতভেদ তৈরি হয়েছে—একদল নতুন চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে চায়, অন্যদল মনে করে সরাসরি সংঘাতই একমাত্র সমাধান। তবে উভয় পক্ষই এক বিষয়ে একমত: ইসরায়েলের সঙ্গে আরেক দফা যুদ্ধ অনিবার্য।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুনে সবশেষ সংঘাতে ইসরায়েল তাদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। অন্যদিকে, ইরান প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছিল ৫০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১ হাজার ১০০ ড্রোন। সেই হামলায় ইসরায়েলে ৩২ জন নিহত এবং ৩ হাজারের বেশি আহত হয়। ইরানে প্রাণহানি হয় এক হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া, ইসরায়েলের ২৪০টি ভবনের ২ হাজার ৩০৫টি বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি হাসপাতালেও ক্ষতি হয়; সেইসঙ্গে অন্তত ১৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

