ফ্রান্সের তৈরি ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান পাচ্ছে ইউক্রেন

মঙ্গলবার,

১৮ নভেম্বর ২০২৫,

৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মঙ্গলবার,

১৮ নভেম্বর ২০২৫,

৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

ফ্রান্সের তৈরি ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান পাচ্ছে ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

Google News
ফ্রান্সের তৈরি ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান পাচ্ছে ইউক্রেন

রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ থেকে নিজেদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি বড় চুক্তির আওতায় ফ্রান্সের তৈরি ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাচ্ছে ইউক্রেন।

প্যারিসের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাথে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করার পর, এই পদক্ষেপকে 'ঐতিহাসিক' বলে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

২০৩৫ সালের মধ্যে রাফাল এফ-৪ বিমানগুলো সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে ইন্টারসেপ্টর ড্রোনের যৌথ উৎপাদন।

যদিও আর্থিক বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে অর্থায়নের চেষ্টা করবে ফ্রান্স। এছাড়া জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদও ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে; এটি এমন একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ যা ২৭ সদস্যের ব্লককে বিভক্ত করছে।

"এটি একটি কৌশলগত চুক্তি যা আগামী বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে চলবে," সোমবার ম্যাক্রোঁর সাথে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন "খুব শক্তিশালী ফরাসি রাডার", আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র পাবে।

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন যে এই ধরনের উন্নত ব্যবস্থা ব্যবহার করার অর্থ "কারও জীবন রক্ষা করা, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ"।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া। যার অধিকাংশই জ্বালানি ও রেল অবকাঠামো লক্ষ্য করে এবং এটি দেশজুড়ে ব্যাপক ব্ল্যাকআউটের সৃষ্টি করেছে।

কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা এই হামলাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছে এবং এসব ঘটনায় কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের বালাক্লিয়া শহরে তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।

জেলেনস্কির সাথে কথা বলতে গিয়ে ম্যাক্রঁ বলেন, "আমরা রাফাল, ১০০টি রাফালের পরিকল্পনা করছি - এটা বিশাল ব্যাপার। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর পুনর্জন্মের জন্য এটাই প্রয়োজন"।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে তিনি ইউক্রেনকে পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে চান।

রাফাল যুদ্ধবিমানগুলোকে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ দেশটি তার সীমান্তবর্তী ছোটো-বড় শহরগুলোয় দূরপাল্লার বিমান হামলা মোকাবিলায় প্রায় অক্ষম।

ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সের্হি কুজান বিবিসিকে বলেন, "রাশিয়ানরা প্রতি মাসে ছয় হাজার গ্লাইড বোমা ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের জন্য ২০০ কিলোমিটার পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য একটি ফরাসি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাশিয়ানদের নিজস্ব ২৩০ কিলোমিটার পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে"।

কিয়েভ এবং প্যারিসের মধ্যে এই ঘোষণাটি বিশাল হলেও, রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট, আরইউএসআই এর জাস্টিন ব্রঙ্ক উল্লেখ করেছেন, "তারা যে পার্থক্য তৈরি করবে সেটি নির্ভর করবে সময়সীমা এবং তাদের সাথে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর"।

তিনি বলছেন, বিস্তারিত ক্রয় আদেশের বিপরীতে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক চুক্তি। তাই খুব কম লোকই আশা করছেন যে এই ঘোষণা রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের গতিশীলতায় নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আনবে।

পশ্চিমা সারমিক সরঞ্জাম সাধারণত ততটুকুই কার্যকর হয়, এগুলোর সঙ্গে যতটা প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। জার্মান-নির্মিত লেপার্ড টু ট্যাংক হোক বা আমেরিকান এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, এগুলোর সবগুলোর জন্যই নিবিড় প্রশিক্ষণ, বিশাল সহায়তা ক্রু এবং প্রচুর খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন।

রাফাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে, অর্থ কে দেবে? এই প্রশ্নটি ঘিরে আরও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে যে, ফ্রান্স কিয়েভের জন্য দেওয়া নিজস্ব বাজেট পর্যালোচনা করবে, পাশাপাশি এই চুক্তির জন্য অর্থ দিতে ইইউ এর যৌথ ঋণ প্রক্রিয়ার দিকেও নজর দেবে।

কিন্তু ব্রাসেলসে ইইউর ক্ষমতাধরদের আলোচনায় স্বীকার করতে শোনা গেছে যে, অর্থ ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে।

এই ব্লক আগামী দুই বছরের জন্য ইউক্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। তবে ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিকভাবে সহায়তা করার জন্য জব্দ করা রাশিয়ার ১৪০ বিলিয়ন ইউরো (১৬২ বিলিয়ন ডলার) সম্পদ ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়নি।

প্রস্তাবগুলো বর্তমানে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু সদস্য যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়াকে অর্থ প্রদানের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী ইতোমধ্যেই ফ্রান্সের মিরাজ যুদ্ধবিমান এবং মার্কিন তৈরি এফ-১৬ ব্যবহার করছে। কিয়েভ সম্প্রতি সুইডেনের গ্রিপেন যুদ্ধবিমান পেতেও সাময়িকভাবে আশ্বস্ত হয়েছে।

ফ্রান্সের পর, জেলেনস্কি ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক এবং অন্যান্য সহায়তা চাইতে স্পেন ভ্রমণ করবেন।

এই সপ্তাহের শেষে, তিনি গ্রিসের সাথে একটি গ্যাস চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। মার্কিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ এখন এই শীতে বলকান অঞ্চল জুড়ে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউক্রেনে প্রবাহিত হতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেন।

বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো এবং বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া সত্ত্বেও, রুশ সেনারা বিশাল ফ্রন্ট লাইন ধরে ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের