পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল ২৪ ভারতীয় গোয়েন্দা

বুধবার,

০৩ ডিসেম্বর ২০২৫,

১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বুধবার,

০৩ ডিসেম্বর ২০২৫,

১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল ২৪ ভারতীয় গোয়েন্দা

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল ২৪ ভারতীয় গোয়েন্দা

পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন স্তরের মোট ৪৯ জনকে দায়ী করেছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিবিদ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, র‍্যাব ও বিডিআর কর্মকর্তা, সাবেক ও বর্তমান আইজিপি এবং তিনজন সংবাদকর্মী।

কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, এসব তথ্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূত্র বলছে, অভিযুক্তরা কেউ পরিকল্পনায়, কেউ সহায়তায়, কেউ উসকানিতে এবং কেউ দায়িত্বে অবহেলার মাধ্যমে ঘটনাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

১১ মাসের অনুসন্ধান শেষে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ২০০৯ সালের ওই হত্যাকাণ্ডে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।

গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, বিশাল ভলিউমের প্রতিবেদনটি সরকার গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করছে এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

কমিশনের সূত্র জানায়, ঘটনার কয়েক মাস আগে তৎকালীন সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস পিলখানায় বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এবং সৈনিকদের অসন্তোষের তথ্য সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর বাসায় শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সোহেল তাজ ও আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ২৪ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে বিদ্রোহ ও কর্মকর্তা হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এবং তাপসকে পলায়নে সহায়তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিদ্রোহের দিন পিলখানায় হিন্দি ও ভিন্ন উচ্চারণে বাংলা ভাষার কথোপকথন শুনেছেন বলে একাধিক সাক্ষী জানিয়েছেন। ঘটনাকালে ৮২৭ জন ভারতীয় পাসপোর্টধারীর দেশে প্রবেশ এবং তাঁদের মধ্যে ৬৫ জনের কোনো বহির্গমন-তথ্য না থাকা—এটিও তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনায় মোট ১৭ জন রাজনৈতিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততার তথ্য এসেছে। সূত্র জানায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পরই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। বিদ্রোহের শুরুতে পরিস্থিতি জানার পরও সেনা পাঠানো বিলম্বিত হওয়ায় হত্যাকারীরা পালানোর সুযোগ পায়।

প্রতিবেদনে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদসহ সামরিক বাহিনীর ১২ জন সাবেক কর্মকর্তা, র‍্যাবের চারজন, বিডিআরের তিনজন এবং পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও সন্দেহজনক আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা নেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

কমিশন জানিয়েছে, ঘটনার সময় কিছু টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যম যাচাইবাছাই ছাড়াই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর তথ্য প্রচার করে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে এবং বিদ্রোহীদের মনোবল বাড়ায়।

কমিশনের পক্ষ থেকে পুনঃতদন্ত, ট্রাইব্যুনালে বিচার এবং প্রতিবেদন সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন সদস্য মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন জানান, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব।

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের