
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শাহবাগে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এমপিওভুক্ত ও শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজীজি এ কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। ততক্ষণে যদি প্রজ্ঞাপন জারি না করে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা বাংলাদেশ কখনও দেখেনি। সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের ঢাকা এনে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করা হবে।
সদস্য সচিব আরও জানান, সোমবার থেকে আন্দোলন আমরণ অনশনে উন্নীত হয়েছে; এ পর্যন্ত চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে দেলোয়ার হোসেন আজীজি বলেন, আমরা তাঁর (উপদেষ্টা) সিদ্ধান্ত মানি না। যদি তিনি আমাদের দাবি মানতে না পারেন, তাহলে তাঁকে মন্ত্রণালয় ছাড়তেই হবে। আমরণ অনশনের কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে দায়দায়িত্ব তাঁর ওপরই বর্তাবে।
এমপিওভুক্ত ও শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের পরিকল্পনা– যারা শহীদ মিনারে যোগ দিতে সক্ষম হবেন না, তারা প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। এ ছাড়া প্রয়োজনে ঢাকায় বড় সমাবেশ ও মজবুত কর্মসূচি কার্যনির্বাহীভাবে ঘোষণা করা হবে।
সদস্য সচিব জানান, বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে; কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হলে সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া গ্রহণযোগ্য হবে না– বাস্তবে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। শিক্ষকদের এসব বক্তব্যের বিষয়ে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকরা আমরণ অনশনে যান। বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষকদের কর্মসূচিতে গিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। সরকারের বাড়ি ভাড়া ভাতা মাত্র ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ৫ শতাংশ যথেষ্ট নয়। শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বিবেচনা করতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা খাতকে জাতীয়করণ করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে বলে জানান এ্যানী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যেভাবে গত ৯ দিন ধরে আপনারা প্রখর রোদে রাজপথে অবস্থান করছেন, এটা করার কথা ছিল না। শিক্ষকরা বারবার রাস্তায় আসেন, আন্দোলন করেন, আবেদন করেন– এই অবস্থা যেন আর না হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা পূর্ণ জাতীয়করণের কথা বলেছি। এ ছাড়া সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান কর্মসূচি স্থলে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সংবাদ সম্মেলন
শিক্ষক আন্দোলনের দাবিগুলো দ্রুত মেনে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। গতকাল দুপুরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা এবিএম জাকারিয়া। তিনি বলেন, শিক্ষাবর্ষের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষক আন্দোলনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলো তালাবদ্ধ। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও বৃত্তি পরীক্ষার সময়। এখনই দাবি পূরণ না হলে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে– এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম