ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী

বৃহস্পতিবার,

০৪ ডিসেম্বর ২০২৫,

২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বৃহস্পতিবার,

০৪ ডিসেম্বর ২০২৫,

২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল নরসিংদী

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকা আবারো কেঁপে উঠলো ভূমিকম্পে। রিখটার স্কেলে চার দশমিক এক মাত্রার হাল্কা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ছয়টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প হয়।

সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানিয়েছেন, নরসিংদীর শিবপুর এই হাল্কা মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।

তিনি জানিয়েছেন, ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৩৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।

এর আগে, গত ২১শে নভেম্বর, শুক্রবার থেকে দেশে শুরু হয় নানা মাত্রার একাধিক ভূমিকম্প।

ওইদিন পাঁচ দশমিক পাঁচ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারাদেশ কেঁপে উঠেছিল।

এরপর গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে কয়েক দফায় ভূমিকম্প হয়েছে।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া চারটায় দেশে ভূমিকম্প হয়। যেটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর টঙ্গীতে। রিখটার স্কেলে চার মাত্রার ভূমিকম্প ছিল এটি।

অর্থাৎ, এখানেই উৎপত্তিস্থল এমন ভূমিকম্পে ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় আজ আবার কেঁপে উঠলাে বাংলাদেশ।

মাঝে গত সোমবার, দোসরা ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও যা অনুভূত হয়েছে।

ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয় ওই ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল চার দশমিক নয়।

গত ২১শে নভেম্বরের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলায় মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ছুটির দিনে সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে তা অনুভূত হয়। একে বাংলাদেশে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে বর্ণনা করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগও।

এর তীব্র ঝাঁকুনিতে দেশজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিলো এবং বিভিন্ন জায়গায় মারা গেছেন অন্তত ১০ জন।

আবহাওয়া বিভাগ প্রথমে এটিকে পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার উল্লেখ করলেও, পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ইউএসজিএসকে উদ্ধৃত করে ভূমিকম্পটি পাঁচ দশমিক পাঁচ মাত্রার ছিলো বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে।

পরদিন শনিবার সকালে আবারও যে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিলো তিন দশমিক তিন। যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলারই পলাশ উপজেলা।

ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

আবহাওয়া বিভাগ সেসময় জানিয়েছিলো, এর একটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী আর অন্যটির উৎপত্তিস্থল ঢাকার বাড্ডা।

এর মধ্যে বাড্ডার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সন্ধ্যা ছয়টা ছয় মিনিট চার সেকেন্ডে, যার মাত্রা ছিলো রিখটার স্কেলে তিন দশমিক সাত।

আর এক সেকেন্ডের মধ্যেই আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদী। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিলো চার দশমিক তিন।

অর্থাৎ, গত ২৪শে নভেম্বরের মধ্যে মোট চারটি ভূমিকম্পের মধ্যে তিনটিরই উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকার কাছেই নরসিংদী জেলার দুটি উপজেলা আর একটির উৎপত্তিস্থল খোদ রাজধানী ঢাকারই বাড্ডা এলাকা বলে সেসময় জানিয়েছিলো আবহাওয়া বিভাগ।

গত ২১শে নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এসব ভূমিকম্প কী ইঙ্গিত দিচ্ছে সে নিয়েও নানামুখী বিশ্লেষণ হচ্ছে।

গত কিছুদিনে কয়েক দফায় ভূমিকম্প হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে ২৪শে নভেম্বর ঢাকায় ৩০০টি ভবনকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

সংস্থাটি সেসময় জানিয়েছিলো, ওইসময় পর্যন্ত তারা প্রায় ৩০০টি ছোট-বড় ভবনকে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এছাড়া একের পর এক ভূমিকম্পে জনমনেও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

তবে, ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হয়ে সচেতন হবার পরামর্শ দিয়েছেন।

সরকারের ফায়ার বিভাগ ভূমিকম্প অনুভূত হলে কি কি করতে হবে সে সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নির্দেশনাবলীও দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকটনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তরদিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে সেসময় বলেছিলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশান জোনের তৈরি হয়েছে।

" এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে " বলেন তিনি ।

তার মতে, " এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিলো। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুললো বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।"

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের