
‘বাংলাদেশে নতুন করে ভিন্নমত দমনের মাত্রা বৃদ্ধির শঙ্কা’ শিরোনামে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় ১৫ সেপ্টেম্বর ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বাংলা অনুবাদ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সংগঠিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং গুমের ঘটনাগুলো ট্র্যাক করেছেন এমন দুইজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে গত বৃহস্পতিবার দুই বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, দেশটিতে নতুন করে ভিন্নমত দমনের মাত্রা বৃদ্ধি সম্পর্কে শঙ্কা জেগে উঠেছে।
রাজধানী ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে দেশের তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের অধীনে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। মানহানিকর মনে করে এমন কিছু মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আইনটি সরকারকে গ্রেপ্তার এবং বিচারের বিস্তৃত ক্ষমতা প্রদান করেছে।
আগামী নির্বাচনের আগে ১৭ কোটি মানুষের উপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করে ধরে রেখেছেন। ভিন্নমতের কণ্ঠকে হয়রানি ও দমন করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব ব্যাপকভাবে দখল করেছেন। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান হলো দেশটির বিচার বিভাগ। (মানবাধিকার কর্মীদের ঘটনাটি) বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে শেখ হাসিনার বিস্তৃত প্রচারণার সর্বশেষ নজির। ক্রমবর্ধমানভাবে ভয়ংকর হয়ে উঠা বিচার ব্যবস্থায় বিরোধীদলীয় সমর্থক, নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা আটকা পড়েছেন। আদালতের কক্ষগুলো তাদের দিয়ে ঠাসা।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নেতা জনাব খান এবং জনাব এলানের বিরুদ্ধে মামলাটির সূচনা- এক দশক আগের একটি নৃশংস ঘটনা নিয়ে তাদের করা একটি ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ থেকে। ২০১৩ সালের ওই রিপোর্টে দেখা গেছে, কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত একটি সমাবেশ সাফ করার জন্য পুলিশ গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি ওই বছরের মে মাসে মহানবী মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে (তাদের ভাষায়) আপত্তিকর মন্তব্য ও কার্টুনের প্রতিবাদে ঢাকাকে অচল করে দেয়। তার জবাবে, পুলিশ গভীর রাতের ক্র্যাকডাউনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং সহিংসতা চালায়।
বিরোধী দলগুলো শত শত মানুষ নিহত হওয়ার অভিযোগ করেছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংখ্যাটি ছিল আনুমানিক ডজনখানেক থেকে ৫০ এর মধ্যে। অধিকারের রিপোর্ট জানায়ঃ নিহত ৬১ জনের নাম পাওয়া গেছে।
রিপোর্টটি প্রকাশের পরপরই, শেখ হাসিনার সরকার ওই দুই মানবাধিকার কর্মীকে আটক করে। জনাব খানকে ৬২ এবং জনাব এলানকে ২৫ দিনের জন্য আটকে রাখে। তাদের রিপোর্টকে দেশের তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী বিকৃত এবং মানহানিকর বলে অভিহিত করা হয়। শেখ হাসিনার কর্মকর্তারা বলতে থাকেন, অপারেশনের সময় কেউ নিহত হয়নি। তিনি সংসদে বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা ‘গায়ে লাল রং মেখে’ ভুয়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে।
এক যৌথ চিঠিতে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ ৩০ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দুই মানবাধিকার কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টিকে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করার প্রতিশোধ’ বলে অভিহিত করেছে। তারা মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তি চেয়েছে।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম