
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ আদায় করে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার (১ জুলাই) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আজকের দিনে আমি এনসিপির পক্ষ থেকে সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণ করছি। আমাদের যে দাবি ছিল, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান— এই তিনটি দাবি আমি আবু সাঈদের কবর থেকে পুর্ব্যক্ত করছি। আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিতে চাই, যদি সরকার বা অন্য কেউ মনে করে থাকেন যে, হাজারো লক্ষ মানুষ যারা রাজপথে নেমে এসেছিল, তারা ঘরে ফিরে গিয়েছে; তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি, আমরা বাংলার প্রতিটি পথে প্রান্তরে যাবো। আমরা বাংলার তরুণ ছাত্র-জনতা শ্রমিকদের আবারও রাজপথে নেমে আসতে আহ্বান জানাবো। আমরা ৩ আগস্ট ঢাকায় আসছি, বাংলাদেশের জনগণ, শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ঢুকবো এবং আমদের যে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ- সেটি আমরা আদায় করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ত শরু হচ্ছে আজ। ঠিক এক বছর আগে এই প্রহেলা জুলাই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছিলাম। যে আন্দোলনে শরিক হয়েছিল হাজারো লক্ষ তরুণ ছাত্রজনতা। আমরা দেখেছি, কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই আন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয়, গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে। আর এই পতন ঘটাতে ক্রীড়ানকের ভূমিকায় পালন করেছিল আবু সাঈদের মৃত্যু ।’
তিনি বলেন, ‘১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা যখন আমরা শুনতে পেয়েছিলাম শহীদ মিনার থেকে, তখন পুরো বাংলাদেশ শোকে, দ্রোহে কেঁপে উঠেছিল। ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে এ আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নেয়। হাজারো লক্ষ ছাত্র তরুণ রাজপথে নেমে আসে এবং সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাদের যে প্রতিবাদ এবং যে নতুন বন্দবস্তের আকাঙ্ক্ষা সেটি ঘোষণা করে।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘একটা নতুন দেশ গঠনের জন্য যে উদ্যোম দরকার; সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্যই মূলত আমাদের এই জুলাই পদযাত্রা। যেখানে আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলবো। তাদের কথা শুনবো। আবু সাঈদরা যে কারণে মারা গিয়েছিল, সেই স্বপ্ন, সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা তাদের কাছে তুলে ধরবো। তাই আমরা রংপুরের পীরগঞ্জের এই পবিত্র মাটি থেকে পদযত্রা শুরু করেছি; যেখানে আবু সাঈদ শায়িত রয়েছে। সেই আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আমরা আমাদের পদযাত্রা শুরু করছি।’
তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে ছিল, সেটাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল। আবু সাঈদের মতো সব শহীদরা আমাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ সকল শহীদদের স্মরণ করবে।’
নাহিদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এখনো হতাশা রয়েছে। কেননা আমরা এখনো বিচারটা সম্পূর্ণ দেখতে পায়নি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সংস্কার সেটিও আমরা এখনো সম্পূর্ণরূপে দেখতে পায়নি। অনেকে বলছে, এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল। আমরা মনে করি, এটা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা সরকার হস্তান্তরের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান ঘটেনি। গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল একটি গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য।’
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম