
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য নতুন বিশেষ ডিজাইনের বুলেটপ্রুফ মিনিবাস কিনছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্যও আনা হচ্ছে বুলেটপ্রুফ জিপ গাড়ি। তবে কী ধরনের বা কোন মডেলের গাড়ি আনা হচ্ছে, তা এখনো জানা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুটি গাড়ি কেনার বিষয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়ার পর সেটির অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুলেটপ্রুফ গাড়ির পর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বিএনপি। মন্ত্রণালয় সূত্র সম্প্রতি জানায়, একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত ৬ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ মাস আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার বিষয়ে নথি পাঠানো হয়েছিল।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পুলিশের বিশেষ শাখা বা এসবি) প্রতিবেদন নিয়ে তার গাড়ির বিষয়ে তখনই অনুমতি দিয়েছি। আর নতুন করে আবেদন এসেছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ির জন্য। তার গাড়ির বিষয়েও আমরা এসবির প্রতিবেদন পেয়েছি। এটারও অনুমতি আজ (৬ অক্টোবর) আমরা দিয়েছি।
জাপান থেকে গাড়ি আমদানি করা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছিলেন, ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। তবে এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে, তখন দেশে আসার তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন তারেক রহমান।
তবে বিএনপি যেভাবে চাইবে, সেভাবে তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তারেক রহমান যখন দেশে ফিরবেন, তখন আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, সব করা হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব চাহিদা দেওয়া হবে, সব নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো চাহিদাপত্র দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি যখন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরলেন, তখন বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল।’
পুলিশ প্রটোকলের বাইরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এটি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। এই ফোর্সে ১০ জন সদস্য আছেন। বেগম খালেদা জিয়া কোথাও গেলে তার নিরাপত্তায় বিশেষ পোশাকে এই সদস্যদের দেখা যায়।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিএসএফের ক্যাপাসিটি নিয়ে আমি মোটেই সন্তুষ্ট না। তাদের সে রকম নিরাপত্তা দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। উনি (তারেক রহমান) দেশে এলে তো বাসায় বসে থাকবেন না। আগামী নির্বাচনে উনাকে সারা বাংলাদেশ চষে বেড়াতে হবে। বাংলাদেশ এত জনাকীর্ণ এলাকা, জ্যাম—এটা চিন্তা করেই উনার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। নিরাপত্তাব্যবস্থা যত দূর সম্ভব নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা করছি। দেশে ফেরার পর তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি সাধারণত দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের। রাজনৈতিক দলের জন্য এ ধরনের অনুমতি খুব কমই দেওয়া হয়েছে অতীতে।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) সূত্রে জানা যায়, সাধারণত জাপান, কানাডা ও জার্মানি বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরি করে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর তার জন্য আরেকবার বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করা হয়।
সাধারণত বেসরকারিভাবে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করতে পারেন না। সরকারিভাবে আনা হয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কারো ব্যবহারের জন্য। জাপান, কানাডা ও জার্মানি থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়। বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনতে খরচ হয় ২ লাখ ডলার (ডলারপ্রতি ১২২ টাকা হিসেবে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা)। ৮০০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আনতে গেলে খরচ পড়বে প্রায় ২২ কোটি টাকা।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম