ছাত্রলীগের মানববন্ধনের ভিডিওকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জাবি

বুধবার,

২৯ অক্টোবর ২০২৫,

১৪ কার্তিক ১৪৩২

বুধবার,

২৯ অক্টোবর ২০২৫,

১৪ কার্তিক ১৪৩২

Radio Today News

ছাত্রলীগের মানববন্ধনের ভিডিওকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জাবি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

Google News
ছাত্রলীগের মানববন্ধনের ভিডিওকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জাবি

প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফটকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলের প্রতিবাদ ও জুলাইয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচারের দাবিতে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় ছাত্রশক্তি, ছাত্রদল ও জাকসু। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন তারা।

রাত নয়টায় বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় ছাত্রশক্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়ে তক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রক্টর অফিসে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।

এসময় ছাত্রশক্তির নেতা আহসান লাবিব বলেন,এনাম ও সোহলের মতো ছাত্রলীগের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা এই ক্যাম্পাসে প্রধান ফটকের সামনে মিছিল করে কিন্তু প্রাক্টর অফিস এ বিষয়ে অবগত না, প্রক্টর অফিস কেনো জানে না নিরাপত্তা অফিস কেনো জানে তাহলে আমরা ধরে নিবো সেই নিরাপত্তা অফিসের ইন্ধনে সেই প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে। আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই নিরাপত্তা অফিসারদের আমরা দেখেছি জুলাই আন্দোলন কারীদের তথ্য ছাত্রলীগের কাছে বিলিয়ে দিতে। জএলাই আন্দোলন কারীরা কোথায় আছে তাদের সেই তথ্য পৌঁছে দিতো ছাত্রলীগের কাছে যাতে আমরা হামলার শিকার হই সেই ব্যবস্থা নিরাপত্তা অফিসাররা করে। এটা লজ্জার বিষয় অভ্যুত্থানের পরেও সেই অফিসাররা এখনো বহাল আছে। 

এদিকে প্রায় একই সময়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও বাইক শোডাউন দিয়েছে ছাত্রদল। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেট থেকে শুরু করে প্রধান ফটক হয়ে বিশ মাইল গেট পর্যন্ত বাইক শোডাউন দেয়। 

এদিকে একই দাবিতে রাত সাড়ে দশটায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাকসু। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বটতলায় এসে শেষ হয়। এসময় জাকসুর কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলীর চিশতির সঞ্চালনায় বক্তারা বক্তব্য রাখেন। 

জাকসুর সহ সাধারণ সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বলেন, “ বিচারহীনতার কারণে আজকে ছাত্রলীগ এই প্রোগ্রাম করার সাহস দেখাতে পেরেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীরা জুলাই হামলায় জড়িত ছিল তাদের বিচার না হওয়ার কারণে আজ তারা সারাদেশে সহিংসতা করছে। আমরা অনতিবিলম্বে সকল হামলাকারীর বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামিলীগ তার রক্তপিপাসু রুপ দেখানোর মাধ্যমে তাদের ফ্যাসীবাদি যাত্রা শুরু করেছিল। তারপর নয় সালের পীলখানা হত্যাকান্ড, তেরো'র গণহত্যা, এবং ২৪ এর গণহত্যার মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদী রক্তপিপাসার সিলিসিলা বজায় রেখেছিল। আমরা আজ দেখেছি ছাত্রলীগ নামের কিছু কুলাঙ্গার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানারে সামনে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে সন্ত্রাসীদেরকে আমাদের চব্বিশের শহীদেরা রক্ত দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে তারা আজীবন নিষিদ্ধই থাকবে। তারা যদি রাজনীতিতে ফেরার দু:স্বপ্ন দেখে তাদের পরিণতি ভালো হবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই আপনাদের গাফেলতির কারনেই ছাত্রলীগ আজ নাশকতা পরিকল্পনা করার সুযোগ পাচ্ছে। আপনারা অতিদ্রুত ছাত্রলীগের শেল্টারদাতাদের চিহ্নিত করুন, অপরাধীদের বিচার করুন এবং প্রশাসনে নিয়োগ বন্ধ করে যে কৃত্রিম ভ্যাক্যুম তৈরি করে রেখেছেন তা ফিলআপ করুন। অন্যথায় ছাত্রলীগ পুণর্বাসনের দায় আপনাদেরকে নিতে হবে।

বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে শাখা শিবিরের সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ছিলো, আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশে ছাত্রলীগের চ্যাপ্টার ক্লোসড। তারা যদি ক্যাম্পাসে ফেরার চেষ্টা করে তাহলে সম্মিলিত ভাবে শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করব।’

সমাপনী বক্তব্যে জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “জাকসুর আগেও আমরা জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলাম, জাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার  পরেও আমরা বিচারের দাবি থেকে এক চুলও সড়ে আসিনি। জুলাই হামলার বিচারের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিতে যেসকল শিক্ষক রয়েছেন, তারা যদি জুলাই হামলায় জড়িত শিক্ষকদের বিচার এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা না করেন, তহলে আমরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে একশনে যাওয়ার আগে আপনাদের বিরুদ্ধে একশনে যাব।”

তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে আমরা রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা সত্যেও সকল সংগঠন যেমন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলাম, তেমনি এখনো যেন আমরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে পারি সেজন্য প্রতিটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।”

উল্লেখ্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জাবি শাখার সভাপতি তার ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানফটকের সামনে পূর্বে ধারণকৃত একটি ভিডিও আপলোড করে। ভিডিওতে চারজনকে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও জুলাই হামলার দায়ে বহিস্কৃত এনামুল হক এনাম এবং কর্মসংস্থান সম্পাদক সোহেল রানা।  

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের