মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনা ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ দাবি করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসরদের উসকানিতে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় তৌহিদী জনতার নামে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং মামলাকে কেন্দ্র করে কোনো তৌহিদী জনতাকে হয়রানি করা যাবে না।’
আজ মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। ‘আবুল সরকারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এবং বাউলদের কর্তৃক আলেম-ওলামা তৌহিদী জনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে উসকানি দিয়ে পণ্ড করার প্রতিবাদে’ এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হলেও এতে উপস্থিত সবাই হেফাজতে ইসলামের নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেলা হেফাজত ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা মুজীবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তাকে জামিনে মুক্ত করার আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। প্রশাসন আলেম-ওলামাদের কর্মসূচির সময় নির্ধারণ করে দিলে তারাও তা মেনে নেন।’
মুজীবুর রহমানে দাবি, গত রোববার নির্ধারিত স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল চলছিল। এ সময় আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীরা সমাবেশের আশপাশে জটলা পাকিয়ে অবস্থান নেয়, যা ‘নীরব উসকানি’। তাদের মধ্যে মারমুখী আচরণ দেখা গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয়পক্ষের চারজন করে আহত হন। এই ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা মুজীবুর রহমান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে আওয়ামী লীগের দোসররা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা সমাবেশস্থলের আশপাশে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে। হামলায় যারা অংশ নিয়েছে, তাদের ছবি আমাদের দেখিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। আমার ছবি দেখে কাউকে চিনতে পারিনি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা হেফাজতে ইসলামের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা গান-বাজনার বিরুদ্ধে নই। বাউলরা গান করুক তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ের ভুল ব্যাখ্যা কিংবা কটূক্তি বরদাশত করা যায় না।’
জেলা হেফাজতের কোষাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাউলদের পক্ষ থেকে করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি থাকবে। এ মামলাকে কেন্দ্র করে যদি প্রশাসন আলেম-ওলামাদের হয়রানি করে, তবে মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল হান্নান, হাসান মাহমুদ শরীফ, মাওলানা শামসুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক কারী ওবায়দুল্লাহ, তথ্য সম্পাদক দেওয়ান তানজিল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মতিন, সহ-আইন সম্পাদক ওমর ফারুক, সদর উপজেলা সভাপতি মুফতি আব্দুল করিম কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান মাহমুদ, আনোয়ার হোসেন রিয়াদ।
এদিকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হামলায় আহত বাউলশিল্পী আবদুল আলিম সোমবার সন্ধ্যায় সদর থানায় একটি মামলা করেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, ওই মামলায় বাদী কারো নাম উল্লেখ করেননি। হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ চলছে। যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তবে কাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের নাম-পরিচয় জানাতে চাননি ওসি।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

