দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহারকে গতিশীল করছে মোবাইল প্রযুক্তি

মঙ্গলবার,

০৯ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

মঙ্গলবার,

০৯ ডিসেম্বর ২০২৫,

২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

Radio Today News

টেলিনর এশিয়ার গবেষণা

দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহারকে গতিশীল করছে মোবাইল প্রযুক্তি

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৮:২৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

Google News
দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহারকে গতিশীল করছে মোবাইল প্রযুক্তি

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শুরু করে আর্থিক সেবা গ্রহণ, দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন ও তথ্য-প্রাপ্তি - সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মোবাইল ফোন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর কল্যাণে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে দৈনন্দিন এসব সুবিধা; যার প্রভাবে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে মানুষের জীবন, কর্মসংস্থান ও পারস্পরিক যোগাযোগের ধারায়। বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৬% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিয়মিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।
 
প্রকাশিত টেলিনর এশিয়া ডিজিটাল লাইভস ডি-কোডেড ২০২৫: বিল্ডিং ট্রাস্ট ইন বাংলাদেশ’স এআই ফিউচার’ শীর্ষক এক রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এটি বাংলাদেশের ১,০০০ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত গবেষণার চতুর্থ সংস্করণ। গবেষণাটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর অগ্রযাত্রা এবং দায়িত্বশীল, নৈতিক ও নিরাপদ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। 

টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইওন ওমুন্ড রেভহগ বলেন, “বাংলাদেশে দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিতে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্মার্ট ও আরও সংযুক্ত সমাজ গঠনে এটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। প্রাত্যহিক জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর ব্যবহার বৃদ্ধি টেলিকম অপারেটরদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণে নতুন সুযোগ ও দায়িত্ব এনে দিয়েছে। সংযোগ হলো ভিত্তি, আর এর প্রতিটি স্তরে আস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে এবং সবার কাছে নিরাপদ ও সুরক্ষিত উপায়ে মোবাইল প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে সংকল্পবদ্ধ টেলিনর এশিয়া।”

১. জীবনকে আরো স্মার্ট করে তুলতে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-কে দৈনন্দিন বাস্তবতায় নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন

বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষা (৬২%), দূরবর্তী কাজ (৫৪%) এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার (৫০%) মতো ক্ষেত্রে স্মার্ট জীবনধারাকে এগিয়ে নিচ্ছে মোবাইল প্রযুক্তি। গত এক বছরে দূরবর্তী কাজ (+৩৯%) এবং বাজেট ও ব্যয় ব্যবস্থাপনায় (+৩৬%) মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

প্রজন্ম-ভেদেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে পার্থক্য দেখা যায়। স্মার্ট হোম ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত ফিচারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করছে মিলেনিয়ালরা। এসব তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, মোবাইল ব্যবহারের বিস্তৃতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-কে আরও গভীরভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রাসঙ্গিক করে তুলছে।

২. শিক্ষা ও অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বাংলাদেশে প্রায় ১০ জনের মধ্যে ৬ জন এখন প্রতিদিন কোনো না কোনো ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছেন। অনেকেই স্কুল, অফিস বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কনটেন্ট তৈরি এবং স্বাস্থ্য, আর্থিক সেবা বা ভ্রমণ পরিকল্পনার মতো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরামর্শ পেতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর সাহায্য নিচ্ছেন। কর্মক্ষেত্র, দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং অনলাইনে কেনাকাটায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের দ্রুত বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি শিক্ষামূলক কনটেন্ট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবটের ওপর মানুষের আস্থা বেশি। এই আস্থাই শিক্ষা ও অর্থনীতিতে সম্ভাবনার আশা জাগাচ্ছে।

৩. কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা

কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের হার ২০২৫ সালে ৪৪% থেকে বেড়ে ৬২%-এ পৌঁছেছে। তবে যারা কর্মস্থলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছেন, তাদের মাত্র অর্ধেক জানিয়েছেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আনুষ্ঠানিক কৌশল রয়েছে। এর মানে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত কর্মক্ষেত্রে কনটেন্ট লেখা ও তৈরি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আরো বহু কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সুযোগ আছে। বর্তমানে দৈনন্দিন ও প্রশাসনিক কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের হার মাত্র ২৮% । প্রযুক্তিটির বিভিন্ন প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি কর্মীদের আরও কার্যকর-ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পারে।

৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর অগ্রগতি নিয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্বেগ বাড়ছে

বাংলাদেশে মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ করলেও, ব্যক্তিগতভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর ওপর অতি-নির্ভরতা, চাকরির নিরাপত্তা-হীনতা এবং গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে।

তরুণ প্রজন্মই সবচেয়ে বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছেন এবং নিজেদেরকে প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ কিংবা দক্ষ বলে মনে করেন। তবুও তারাই সবচেয়ে বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই আশাবাদ ও সতর্কতার মিশ্রণ এমন একটি জনগোষ্ঠীর ছবি তুলে ধরে যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণে আগ্রহী, তবে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা চায়।

ইওন ওমুন্ড আরও বলেন, “বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-এর সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাও রয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে সবার জন্য সংযোগ ও নিরাপদ ডিজিটাল দক্ষতা নিশ্চিত করা আরও জরুরি হয়ে উঠছে। সংযুক্ত না হলে কিংবা নিরাপদভাবে ডিজিটাল দুনিয়া পরিচালনা করার সক্ষমতা না থাকলে মানুষ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রদত্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব হলো ডিজিটাল বৈষম্য কমানো এবং এমন একটি সমাজ গঠন করা যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের