শনিবার,

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

২১ ভাদ্র ১৪৩২

শনিবার,

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫,

২১ ভাদ্র ১৪৩২

Radio Today News

৩০ বাংলাদেশিকে হাতকড়া-শিকল পরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত

রেডিওটুডে রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Google News
৩০ বাংলাদেশিকে হাতকড়া-শিকল পরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত

"পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল" এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় অপরাধীর মতো আটকে রাখার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল (ছদ্মনাম)।

উন্নত জীবনের আশায় গত অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। মাত্র আটদিন পরেই তাকে আটক করা হয়, নেওয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে।

দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয় ২৯ বছর বয়সী রুবেলকে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার।

অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সবশেষ সামরিক বিমানে চাপিয়ে অন্য অনেকের সাথে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সাথে ছিল অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও।

তাদের সবাইকে শিকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই জার্নিতে কেবল চিজ দেওয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান রুবেল।

"পানির জন্য ধরেন গলা শুকায়ে যাই। আমরা এতো পানি চাইছি, আমাদেরকে ওনারা পানিই দেয় না। কিন্তু ওনারা ঠিকই একটার পর একটা বোতল খুইলা পানি খাইতাছে, এই খাবার খাইতাছে, ওই খাবার খাইতাছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই নাই", বলেন দেশে ফেরত পাঠানো এই অভিবাসনপ্রত্যাশী।

পেটে শিকল বেঁধে রাখার কারণে সেই পানিটাও মুখে তুলে খেতে কষ্ট হয়েছে বলে জানান রুবেল। বলেন, শৌচাগারে নেওয়ার সময়ও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি হাতকড়া। ভেতরে ঢুকলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন কোনো অফিসার।

"আমরা যে চেয়ারে বসছি, সেখান থেকে হিলতে পারি না। হিললে ওনারা আইসা যাইতা ধইরা বসায় দেয়", অভিযোগ করেন তিনি।

সূত্র বলছে, গত দোসরা অগাস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজে একজন নারীসহ ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।

একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেই ফ্লাইটে ফেরত আসা আরেক অভিবাসনপ্রত্যাশী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, সেই ফ্লাইটটিতে অন্য দেশের নাগরিকও ছিল। আর বেঁধে রাখার বিষয়টিও পুরোটা সময় 'কন্টিনিউ' করেছে।

তারও আগে কুরবানির ঈদের আগ দিয়ে ফেরত পাঠানো আরেকটি দলের সাথে দেশে ফিরেছিলেন নোয়াখালীর ইমরান হোসেন।

ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সময় খুব কম খাবার দেওয়ার কথা জানান তিনিও।

অবশ্য তাদের ফেরত পাঠানোর সময় বিমানে শিকল পরানো হয়নি বলে জানান তিনি। তবে বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের ছোট একটি কক্ষে ১৫ ঘণ্টার মতো রাখা হয়েছিল, সেখানে পরানো হয়েছিল শিকল আর হাতকড়া।

অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ ভাড়া করা বিমানে একজন নারীসহ ৩০ বাংলাদেশিকে একইভাবে হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তাদেরই একজন নোয়াখালীর আসগর হোসেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক ওই ফ্লাইটে ছিল। একেক দেশে গিয়ে তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু পাঁচদিনের যাত্রার পুরোটা সময় তাদের শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল। "বিমান যখন আমাদের এখানে ল্যান্ড করছে, তখন আমাদের হাত থেকে শিকলটা খুলছে"।

তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হয় এবং বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এড়িয়াতে পৌছানোর আগেই সবাইকে শিকলমুক্ত করে দেওয়া হয়।

অগাস্টে আসা আগের দলটির মতোই তাদেরও শৌচাগারে যাওয়ার সময় কেবল এক হাত খুলে দেওয়া হয়েছে, খাবারও দেওয়া হয়েছে সামান্য।

বিমানবন্দর ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ই জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে, ৬ই মার্চ থেকে ২১ শে এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরো অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল

২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে।

অথচ এনিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ফেরা অভিবাসন প্রত্যাশীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরে আনা হয়।

এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা কোনো ধরনের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে দেশের ফেরত পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশনের ডিআইজি পদে থাকা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন।

"এভাবে কোনো বাংলাদেশি এয়ারপোর্টে আসে নাই। গতকালও আসে নাই। অ্যামেরিকা থেকে যেগুলা এসেছে কোনোটাই এভাবে আসে নাই। যারা বলে তারা কেন বলে কী জন্য বলে আপনারা দেখবেন এটা", বিবিসি বাংলাকে বলেন ওই কর্মকর্তা।

তবে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এবিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বিবিসি বাংলাকে জানান, গতকাল এবং তার আগে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের কারও কারও সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

"ডিপোর্ট করার সময় কেউ কেউ হয়তো ভায়োলেন্ট আচরণ করে, এরকম নজির হয়তো আছে। আর বিভিন্ন দেশে যখন ডিপোর্ট করা হয়, সেক্ষেত্রে তাদেরও বোধহয় সিমিলারি বিষয়টাকে এড্রেস করা হয়", বলেন তিনি।

এছাড়া ফ্লাইটে অন্যান্য দেশের নাগরিক থাকার কারণেও এমনটা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে আরও জানার জন্য সংশ্লিষ্ট উইং চেষ্টা করছে বলেও জানান মি. আলম। এই প্রক্রিয়ায় পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সরকা

রেডিওটুডে নিউজ/আনাম

সর্বশেষ

সর্বাধিক সবার কাছের