
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমাতে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে আবারও মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ রোববার (১০ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহুমূল্য নিলাম পদ্ধতিতে ১১টি ব্যাংক থেকে মোট ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রয় করেছে।
নিলামে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত হয় ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত, যেখানে কাট-অফ রেট ছিল ১২১.৫০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, রোববারের নিলামে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা দরে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কেনা হয়। বাকি ৭১ মিলিয়ন ডলার কেনা হয় ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে।
তিনি বলেন, বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনে ডলার কেনা বা বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গভর্নর আগেই বলেছেন বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে ডলার কেনা হবে এবং প্রয়োজন হলে আবার ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হবে। মূল লক্ষ্য হলো আন্তঃব্যাংক বাজারে বিনিময় হার ও ডলার সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা।
সাম্প্রতিক সময়ে ডলার বাজারে স্থিতি আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিকবার নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনেছে।
১৩ জুলাই: ১২১.৫০ টাকায় ১৭১ মিলিয়ন ডলার
১৫ জুলাই: ১২১.৫০ টাকায় ৩১৩ মিলিয়ন ডলার
২৩ জুলাই: ১২১.৯৫ টাকায় ১০ মিলিয়ন ডলার
৭ আগস্ট: ১২১.৩৫-১২১.৫০ টাকায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার
১০ আগস্ট: ৮৩ মিলিয়ন ডলার
সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ৬২২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমাতে এবং টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় কিছুটা বেড়েছে, তবে আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ এখনো বিদ্যমান। এই পরিস্থিতিতে বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডলার কিনছে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে তা আবার সরবরাহ করা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা হলে তা রিজার্ভে যুক্ত হয়, যা দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো ও ঋণ পরিশোধে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি ডলার বাজারে একটি মনস্তাত্ত্বিক স্থিতি আনে, যা বিনিময় হার নিয়ে অস্থিরতা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ধারাবাহিক ডলার ক্রয় আগামী দিনে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে। তবে তারা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতি আনতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
সব মিলিয়ে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ কমানো এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় কার্যক্রমকে বিশেষজ্ঞরা কৌশলগত ও সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম