
স্বাধীনতার পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল সোনালি আঁশ বা পাটকে ঘিরে। কিন্তু ৫৪ বছর পর যেন এক রকম মেরে ফেলা হয়েছে সেই সম্ভাবনাকে। বিশ্ববাজারে চাহিদা আর অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরও কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোতে পারেনি এই খাত। তবুও বরাবরের মতোই নতুন অর্থবছরে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এই খাতের রপ্তানি ঘিরে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ৮২ কোটি ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ কম। অথচ চলতি অর্থবছর এই খাত থেকে বাড়তি আয়ের প্রত্যাশা অন্তত ১০ শতাংশ। রপ্তানিকারকদের মতে, বড় চ্যালেঞ্জ ক্রেতা আকর্ষণ। এক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনী পণ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পাট পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না চ্যানেল 24 বলেন, যারা হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট বা সেমি হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতোমধ্যেই রপ্তানি করছে, বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্টিভিটি কীভাবে বাড়ানো যায়, তাদের স্কেলটাকে কীভাবে এনলার্জ করা যায় এবং বিশেষ করে মার্কেটকে ডেভলপ করার ক্ষেত্রে একটা বড় বিনিয়োগ করতে হয় ইন্ডিভিজুয়ালি, সরকার কীভাবে সেখানে সহযোগিতা করতে পারে, এসব বিষয়ে কাজ করতে হবে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে, পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয়ের প্রধান চালক তৈরি পোশাক থেকেই এবার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৬ বিলিয়ন বা ১৬ শতাংশ বেশি। উদ্যোক্তারা বলছেন, অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না করে গতানুগতিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান চ্যানেল 24 কে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যারা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন, তাদের আবার খুব বেশি পরিমাণে প্রভাব অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ওপর নাই। যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে কি কি করতে হবে, তারা সেটা নিয়মিতভাবে সুপারিশ দিচ্ছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দরকার, সেখানে ঘাটতি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূরাজনৈতিক কারণে একরকম ঝুঁকিতে বিশ্ববাজার। তবুও রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে উদ্যোক্তাদের। আর সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রস রপ্তানি তো একটা আছে, কিন্তু আমরা আমাদের ভ্যালুয়েডশনটা ডোমেস্টিক কতটুকু করতে পারছি, এটা দিয়েই কিন্তু নির্ধারিত হবে আমাদের রিজার্ভে কতটুকু আমরা যোগ করতে পারব। আমাদের এখানে কতটুকু কর্মসংস্থান করতে পারব, কিন্তু আমাদের স্থানীয় মূল্য সংযোজনের ওপরে বেশি নির্ভরশীল।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম