
সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা বর্তমানে একটি জ্বলন্ত নক্ষত্রের নাম। বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। শিফা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী।
গাজীপুরের মেয়ে শিফা একজন ইঞ্জিনিয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ ও শিক্ষক মা সোহরাত বেগমের সন্তান। বাবা দু’বার জাতিসংঘের স্কলারশিপে মস্কোতে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর অধীন প্রতিষ্ঠান ‘অবনিন্সক টেক একাডেমি’ শিফাকে ‘ভিজিবল পাওয়ার ফিমেল লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে মনোনীত করেছে।
সারা বিশ্বের আবেদনকারীদের মধ্য থেকে কয়েক ধাপের বাছাই প্রক্রিয়া শেষে শিফাকে নির্বাচিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে তার পূর্ববর্তী কর্মঅভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম, অর্জিত পুরস্কার-স্বীকৃতি এবং গবেষণাকর্মকে মূল্যায়ন করা হয়।
নির্বাচিত ৫০ নারী নেত্রী অংশ নেবেন রাশিয়ার ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক এবং আন্তর্জাতিক নারী নেতৃত্ব কর্মশালা ফিমেল লিডারশিপ ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারী অংশ নেবেন পারমাণবিক শিল্পের ৮০ বছরের সাফল্য উদযাপনে।
এর আগে শিফা একাধিকবার রাশিয়া ও অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সামিট ও যুবসম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। ভারতের মেঘালয়ের নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসে (UITS) প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিফা ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্পে গ্রান্ট অ্যাকুইজিশন ম্যানেজমেন্টের লিড প্রগ্রাম অফিসার হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি দেশের তরুণদের সফট স্কিল ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট’, যার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তিনি নিজেই।
শিফার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোচিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব, ২০২৪ সালে মস্কোয় ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস কমিটিতে বাংলাদেশের হেড হিসেবে নেতৃত্ব এবং রাশিয়ার ইউরেশিয়া গ্লোবালে টিম বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ পাওয়া।
তাছাড়া তিনি ২০১৯-২০ সালে টোস্টমাস্টার্স ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব পাবলিক স্পিকিংয়ে বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পিচ কনটেস্ট চ্যাম্পিয়ন হন। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে প্রতিযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাডভান্সড টোস্টমাস্টার্স ক্লাবের নারী সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে শিফা রাশিয়ার ‘ডাইরেক্টোরেট অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফেস্টিভাল’-এর অধীনে ন্যাশনাল প্রিপারেটরি কমিটি অব বাংলাদেশ-এর শিশু কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০২৭ সালের মধ্যে ‘ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট’ কর্মসূচির মাধ্যমে এক লাখ শিশুকে কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন ও স্পিকিং দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করাই তার লক্ষ্য।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম