
বড় ধরনের কোনো ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় ভোট গণনা। ভোট গণনার বিষয়টি কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটাররা। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে বেশ কয়েকটি এলইডি স্ক্রিন বসানো হয়েছে। প্রার্থীদের ভোটের অবস্থা কেমন তা দেখতে সবার চোখ এখন এলইডি স্ক্রিনে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এলইডি স্ক্রিনের চারপাশে কৌতূহলী শিক্ষার্থীদের ভিড়। সবার দৃষ্টি ফলাফলের দিকে।
তানিয়া রহমান নামে এক শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, পছন্দের প্রার্থীকে আনন্দ নিয়ে ভোট দিয়েছি। এখন ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রের ভেতরে আমাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই বাইরে বসানো এলইডি স্ক্রিনে ফলাফল গণনার যাবতীয় বিষয় দেখছি। আমার মতো অনেকের চোখ এখন তাই এলইডি স্ক্রিনে।
এক প্রার্থীর সমর্থক মো. জুলফিকার বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রে বসানো এলইডি স্ক্রিন কিছুক্ষণ পর পর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর আবার চালু হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। কারণ কারচুপি করতে এমনটি করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় পড়েছি।
লাবিবা তারান্নুম নামে এক প্রার্থী বলেন, ভোটার, কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এলইডি স্ক্রিনে ভোটগণনা কার্যক্রম তদারকি করছি। তবে এলইডি স্ক্রিন কিছুক্ষণ পর পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে নানা আশঙ্কায় আছি। আমরা চাই সবকিছু যাতে স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হয়।
ভোটগ্রহণ শেষে চাকসুর নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন।
অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, চাকসু নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সকল কেন্দ্রের চূড়ান্ত তথ্য আসেনি। পর্যায়ক্রমে তথ্য আসছে। তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৬৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, আইটি ভবনে ৭২ শতাংশ এবং বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৬৯ শতাংশ ভোটারের ভোট পড়েছে। অন্য অনুষদ ভবনে হওয়া চূড়ান্ত তথ্য পাইনি।
এদিকে নির্বাচনে আর্টিস্ট রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন খন্দকার মাসুরুল আল ফাহিম। তিনি পেয়েছেন ৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আল মোসাদ্দেক জামান নিউ শাহ পেয়েছে ৪৬ ভোট।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক আরিফুল হক সিদ্দিকী।
তিনি জানান, আর্টিস্ট রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে জিএস নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আফসার সরকার। তিনি পেয়েছেন ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মেহেদী হাসান পেয়েছেন ৬০ ভোট। এখানে মোট ভোটার ১৫৪ জন। তার মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১২৪ জন শিক্ষার্থী।
বড় কোনো অঘটন ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে বুধবার বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে দায়িত্বে ছিলেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১২০০ সদস্য। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে ও পরে কয়েকটি কেন্দ্রের সামনে প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। যদিও কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি আবারও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ ১৩টি প্যানেল থেকে ৯০৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি পদে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ১৪টি পদে ৪৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৬ হাজার ৮৪ জন এবং মোট নারী ভোটার ১১ হাজার ৩২৯ জন।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম