
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আইনবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে ১৫টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে উচ্চ আদালতে এখন পর্যন্ত একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। কোন প্রস্তাবটি বিবেচিত হয়েছে তাও জানি না। তবে আইন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে অনেক বিষয়ে সংস্কার এনেছে। বিশেষ করে সিআরপিসি, সিপিসিতে ব্যাপক সংস্কার এনেছি। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় মানুষের ভয়াবহ ভোগান্তি হয়। সেই ভোগান্তি হ্রাসে সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন আছে। উচ্চ আদালতের সিরিয়াল নম্বর বা আগের মামলা পেছনে, পেছনের মামলা আগে চলে আসছে, এগুলো কিভাবে হয়, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।’
আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসে ‘ই-বেইলবন্ড প্রবর্তন: ন্যায়বিচারে সহজগম্যতা’ শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা বিচারের সময় কমাতে এবং বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি হ্রাস করতে অনেক কাজ করছি। ফৌজদারি কার্যবিধিতে পরিবর্তন এনে অনলাইনে সরকারি (বিচারক, চিকিৎসক ও পুলিশ) সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালত পৃথক করা হয়েছে, যাতে বিচারকেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে পারেন।’
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, নিম্ন আদালতে বিচারকার্য শেষ হয়ে যায়; কিন্তু উচ্চ আদালতে বছরের পর বছর তা ঝুলে থাকে। যেমন শিশু আছিয়ার ঘটনায় নিম্ন আদালতে আমরা এক মাসে বিচার কাজ শেষ করতে পারলেও উচ্চ আদালতে আগামী কয়েক বছরেও এই মামলা নিষ্পন্ন করা যাবে কিনা জানি না। আমাদের উচ্চ আদালতের বিচারক অনেক সময় নিম্ন আদালতে ইন্সপেকশনে যান; কিন্তু তা আনন্দ ভ্রমণে পরিণত হয়।’
বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানোর বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা লিগ্যাল এইডের ব্যবস্থা করেছি, যেন ছোটখাটো বিরোধ নিয়ে কোর্টে যেতে না হয়। সেজন্য আমরা অনেকগুলো সংস্কার করেছি। এটাও পাইলট পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে ই-বেইলবন্ড, অনলাইন লিগ্যাল এইড সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারব। আমরা যে সংস্কারগুলো করেছি, তার মূল উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। বিচারপ্রার্থী মানুষের ভোগান্তি কমানো এবং তাদের অর্থের সাশ্রয় করা। এই হয়রানি দূর করার জন্য আমরা সংস্কারের ব্যবস্থা করছি।’
নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এখানে অনেক বড় গডফাদার ছিল। অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এখানে। সাত খুনের মতো ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। আমরা নারায়ণগঞ্জকে নির্যাতনের পরিবর্তে স্বস্তির জেলা হিসাবে দেখাতে চাই। তাই আমরা ন্যায়বিচারের সূচনা এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই শুরু করলাম। নির্যাতনের জায়গা থেকে ন্যায়বিচারের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ই-বেইলবন্ডের উদ্বোধন নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হলো।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহার হোসেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা, অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জেলা সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. মশিউর রহমান, মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপি’র সদস্যসচিব অ্যাড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান প্রমুখ।
রেডিওটুডে নিউজ/আনাম