অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) আমাদের স্বাস্থ্য এবং জীবন বাঁচানো ঔষধগুলোর জন্য এক ভয়ংকর বিপদ ডেকে এনেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ব্যবহৃত প্রায় ৯৭% অ্যান্টিবায়োটিকই এখন আর ঠিকমতো কাজ করছে না। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশে এক বছরে এএমআর-এর কারণে ২৬,২০০ জনেরও বেশি মানুষ সরাসরি মারা যান। নীরব এ মহামারি ঠেকাতে সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করা জরুরি।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর, ২০২৫) দুপুরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ “ক্লিনিক থেকে কমিউনিটি : বাংলাদেশে এএমআর সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা বাড়াতে সবাই মিলে এগিয়ে আসা প্রয়োজন”শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন। বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ (ডব্লিউএএডব্লিউ) উপলক্ষে সচেতনতা বাড়াতে এই ওয়েবিনারটি আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক ফাউন্ডেশন। এ বছর ডব্লিউএএডব্লিউ-এর স্লোগান হলো “এখনই কাজ শুরু করুন : আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখুন।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডা. সামসাদ রাব্বানী খান (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ন্ত্রণ, ভাইরাল হেপাটাইটিস ও ডায়রিয়া রোগ কর্মসূচী, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে); ডাঃ অনিন্দ্য রহমান (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ-এর ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার-এএমআর); ডাঃ খালেদা ইসলাম (প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা-এর প্রাক্তন পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়); এবং অধ্যাপক ড. রুমানা হক (আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক)।
ওয়েবিনারে ডা. অনিন্দ্য রহমান এএমআর পর্যবেক্ষণে কিছু গুরুতর ঘাটতি আছে উল্লেখ করে বলেন, পশুপালন ও পরিবেশ খাত থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য একসাথে পাওয়া যাচ্ছে না এবং ল্যাবরেটরির রিপোর্টেও গড়মিল থাকে। তিনি পরামর্শ দেন যে, কম খরচে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহারের নিয়ম বা স্টুয়ার্ডশিপ প্যাকেজ চালু করতে হবে এবং ভালো হাসপাতাল প্রোটোকল তৈরি করতে অণুজীববিজ্ঞানী ও ডাক্তারদের নিয়ে দল গঠন করা দরকার।
এসময় ডাঃ সামসাদ রাব্বানী খান স্কুল থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সবার মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে বলেন, “আমাদের অবশ্যই কমিউনিটিতে নজরদারি চালিয়ে ফার্মেসির আইন কার্যকর করতে হবে। যারা প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যারা নিয়ম মেনে চলবে, তাদের পুরস্কৃত করতে হবে।”
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ডাঃ খালেদা ইসলাম বলেন, গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মীরা যদিও অতিরিক্ত কাজের চাপে আছেন, তবুও এএমআর নিয়ন্ত্রণে তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। জাতীয় টিকা দান কর্মসূচীর মতো সফলভাবে আমরা যেভাবে কাজ করেছিলাম, সেভাবে বিভিন্ন খাতকে একসাথে নিয়ে এসে এএমআর প্রতিরোধের কাজটিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।”
ওয়েবিনারে তরুণ জনস্বাস্থ্য গবেষক, কমিউনিটি কর্মী, ঔষধ বিক্রেতাসহ অর্ধশত উন্নয়নকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

